পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শেষের কবিতা ·ථ8` “রাগ কর কেন, মিতা ? রবি ঠাকুর বা পারে তার বেশি সে পারে না এ-কথা বারবার বলে লাভ কী ?” * “তোমরা সবাই মিলে তাকে নিয়ে বড়ো বেশি—” “ও-কথা বলে না, মিতা । আমার ভালো-লাগা আমারই, তাতে যদি আর-কারও সঙ্গে আমার মিল হয় বা তোমার সঙ্গে মিল না হয় সেটাতে কি আমার দোষ ? না-হয় কথা রইল; তোমার সেই পচাত্তর টাকার বাসায় একদিন আমার যদি জায়গা হয় তাহলে তোমার কবির লেখা আমাকে শুনিয়ো, আমার কবির লেখা তোমাকে শোনাব না।” “কথাটা অন্যায় হল যে। পরস্পর পরম্পরের জুলুম ঘাড় পেতে বহন করবে এইজন্যেই তো বিবাহ ।” இ “রুচির জুলুম তোমার কিছুতেই সইবে না। রুচির ভোজে তোমরা নিমন্বিত ছাড়া কাউকে ঘরে ঢুকতে দাও না, আমি অতিথিকেও আদর করে বসাই ।” “ভালো করলুম না তর্ক তুলে। আমাদের এখানকার এই শেষ সন্ধোবেলার সুর লিগড়ে গেল।” “একটুও না । যা-কিছু বলবার আছে সব স্পষ্ট করে বলেও ষে-সুরট খাটি থাকে সেই আমাদের সুর। তার মধ্যে ক্ষমার আস্ত নেই।” “আজ আমার মুখের বিস্বাদ ঘোচাতেই হবে । কিন্তু বাংলা কাব্যে হবে না । ইংরেজি কাব্যে আমার বিচারবুদ্ধি অনেকটা ঠাণ্ড থাকে। প্রথম দেশে ফিরে এসে আমিও কিছুদিন প্রোফেসারি করেছিলুম।” লাবণ্য হেসে বললে, “আমাদের বিচারবুদ্ধি ইংরেজ বাড়ির বুলডগের মতো—ধুতির ক্টোচাটা দুলছে দেখলেই ঘেউ ঘেউ করে ওঠে । ধুতির মহলে কোনটা ভদ্র ও তার হিসেব পায় না । বরঞ্চ খানসামার তকমা দেখলে লেজ নাড়ে ।” “ত মানতেই হবে। পক্ষপাত-জিনিসটা স্বাভাবিক জিনিস নয়। অধিকাংশ স্থলেই ওটা ফরমাশে তৈরি । ইংরেজি সাহিত্যে পক্ষপাত কানমলা খেয়ে খেয়ে ছেলেবেলা থেকে অভ্যেস হয়ে গেছে। সেই অভ্যেসের জোরেই এক পক্ষকে মন্দ বলতে যেমন সাহস হয় না অন্ত পক্ষকে ভালো বলতেও তেমনি সাহসের অভাব ঘটে । থাক গে, আজ নিবারণ চক্রবর্তীও না, আজ একেবারে নিছক ইংরেজি কবিতা—বিনা তর্জমায়।” “না না মিতা, তোমার ইংরেজি থাক, সেটা বাড়ি গিয়ে টেবিলে বসে হবে। আজ আমাদের এই সন্ধ্যেবেলাকার শেষ কবিতাটি নিবারণ চক্রবর্তীর হওয়াই চাই । আর-কারও নয় ।”