পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শেষের কবিতা උNA কিছু আছে এ-কথা কেউ ভাৰতে পারে না। সিসি মনে-মনে হাসে, কেটি মনে-মনে জলে । নিজের সমস্তাটাই অমিতর কাছে এত একান্ত যে, বাইরের কোনো চাঞ্চল্য লক্ষ্য করার শক্তিই তার নেই। তাই সে নিঃসংকোচে সখীযুগলের কাছে বলে, *চলেছি এক জলপ্রপাতের সন্ধানে।” কিন্তু প্রপাতটা কোন শ্রেণীর, আর তার গতিটা কোন অভিমুখী, তা নিয়ে অন্তদের মনে যে কিছু ধোঁকা আছে তা সে বুঝতেই পারে না । আজ বলে গেল, এক জায়গায় কমলালেবুর মধুর সওদা করতে চলেছে। মেয়ে দুটি নিতান্ত নিরীহভাবে সরল ভাষায় বললে, এই অপূর্ব মধু সম্বন্ধে তাদের ছদ্মনীয় কৌতুহল, তারাও সঙ্গে যেতে চায়। অমিত বললে, পথ দুৰ্গম, যানবাহনের আয়ত্তাতীত। বলেই আলোচনাটাকে প্রথম অংশে ছেদন করেই দৌড় দিলে। এই মধুকরের ডানার চাঞ্চল্য দেখে দুই বন্ধু স্থির করলে আর দেরি নয়, আজই কমলালেবুর বাগানে অভিযান করা চাই। এদিকে নরেন গেছে ষোড়দৌড়ের মাঠে, সিসিকে নিয়ে যাবার জন্তে খুব আগ্রহ ছিল । সিসি গেল না । এই নিবৃত্তিতে তার কতখানি শমদমের দরকার হয়েছিল তা দরদি ছাড়া অন্তে কে বুঝবে। Ꮌ☾ ব্যাঘাত দুই সখী যোগমায়ার বাগানে বাইরের দরজা পার হয়ে চাকরদের কাউকে দেখতে পেলে না । গাড়িবারাণ্ডায় এসে চোখে পড়ল বাড়ির রোয়াকে একটি ছোটো টেবিল পেতে একজন শিক্ষরিত্রী ও ছাত্রীতে মিলে পড়া চলছে। বুঝতে বাকি রইল না ; এরই মধ্যে বড়োটি লাবণ্য । কেটি টকটক করে উপরে উঠে ইংরেজিতে বললে, “দুঃখিত।” লাবণ্য চৌকি ছেড়ে উঠে বললে, “কাকে চান আপনারা ?” কেটি এক মূহূর্তে লাবণ্যর আপাদমস্তকে দৃষ্টিটাকে প্রখর কাটার মতো দ্রুত বুলিয়ে নিয়ে বললে, “মিস্টার অমিট্রায়ে এখানে এসেছেন কি না খবর নিতে এলুম।” লাবণ্য হঠাৎ বুঝতেই পারলে না, অমিট্রায়ে কোন জাতের জীব। বললে, “তঁাকে তো আমরা চিনি নে ৷” অমনি দুই সখীতে একটা বিদ্বাচ্চকিত চোখ-ঠারাঠারি হয়ে গেল, মুখে পড়ল