পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

9ున్న রবীন্দ্র-রচনাবলী “কী করতে হবে, বলে ।” “নরেনের সঙ্গে আমার একটা বাজি আছে। সে বলেছিল, জেন্টেলম্যানরা যেখানে যায় কেউ সেখানে তোমাকে নিয়ে যেতে পারে না, কিছুতেই তুমি রেস দেখতে যাবে না। আমি আমার এই হীরের আংটি বাজি রেখে বলেছিলুম, তোমাকে রেসে নিয়ে" যাবই। এ-দেশে যত ঝরনা, যত মধুর দোকান আছে সব সন্ধান করে শেষকালে এখানে এসে তোমার দেখা পেলুম। বলে না, ভাই সিসি, কত ফিরতে হয়েছে বুনে হাস শিকারের চেষ্টায়, ইংরেজিতে যাকে বলে wild goose " ` সিসি কোনো কথা না বলে হাসতে লাগল। কেটি বললে, “মনে পড়ছে সেই গল্পটা—একদিন তোমার কাছেই শুনেছি অমিট। কোন পাশিয়ান ফিলজফার তার পাগড়ি-চোরের সন্ধান না পেয়ে শেষে গোরস্থানে এসে বসেছিল। বলেছিল, পালাবে কোথায় ? মিস লাবণ্য যখন বলেছিলেন ওকে চেনেন না আমাকে ধোক লাগিয়ে দিয়েছিল, কিন্তু আমার মন বললে, ঘুরে ফিরে ওকে ওর এই গোরস্থানে আসতেই হবে ।” সিসি উচ্চৈঃস্বরে হেসে উঠল। কেটি লাবণ্যকে বললে, “অমিট আপনার নাম মূপে আনলে না, মধুর ভাষাতে ঘুরিয়ে বললে, কমলালেবুর মধু ; আপনার বুদ্ধি খুবই বেশি সরল, ঘুরিয়ে বলবার কৌশল মুখে জোগায় না, ফস করে বলে ফেললেন, অমিটকে জানেনই না । তবু সান ডে স্কুলের বিধানমতো ফল ফলল না, দণ্ডদাতা আপনাদের কোনো দণ্ডই দিলেন না, শক্ত পথের মধুও একজন এক চুমুকেই খেয়ে নিলেন, আর অজানাকেও একজন এক দৃষ্টিতেই জানলেন, এখন কেবল আমার ভাগ্যেই হার হবে ? দেখো তো, সিসি, কী অন্যায় ।” সিসির আবার সেই উচ্চ হাসি । ট্যাবি কুকুরটাও এই উচ্ছ্বাসে যোগ দেওয়া তার সামাজিক কর্তব্য মনে করে বিচলিত হবার লক্ষণ দেখালে। তৃতীয়বার তাকে দমন করা হল । কেটি বললে, “অমিট তুমি জান, এই হীরের আংটি যদি হারি, জগতে আমার সান্থনা থাকবে না। এ আংটি একদিন তুমিই দিয়েছিলে। একমুহূর্ত হাত থেকে খুলি নি, এ আমার দেহের সঙ্গে এক হয়ে গেছে। শেষকালে আজ এই শিলঙ পাহাড়ে কি একে বাজিতে খোয়াতে হবে ?” সিসি বললে, “বাজি রাখতে গেলে কেন, ভাই ?” “মনে-মনে নিজের উপর অহংকার ছিল, আর মানুষের উপর ছিল বিশ্বাস ।