পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૭૭8 রবীন্দ্র-রচনাবলী So মুক্তি একটি ছোটো চিঠি এল লাবণ্যর হাতে, শোভনলালের লেখা : শিলঙে কাল রাত্রে এসেছি। যদি দেখা করতে অনুমতি দাও তবে দেখতে ষাব। না যদি দাও কালই ফিরব । তোমার কাছে শাস্তি পেয়েছি, কিন্তু কবে কী অপরাধ করেছি আজ পর্যন্ত স্পষ্ট করে বুঝতে পারি নি। আজ এসেছি তোমার কাছে সেই কথাটি শোনবার জন্তে, নইলে মনে শাস্তি পাই নে। ভয় ক’রে না। আমার আর কোনো প্রার্থনা নেই। লাবণ্যর চোখ জলে ভরে এল। মুছে ফেললে। চুপ করে বসে ফিরে তাকিয়ে রইল নিজের অতীতের দিকে । ষে-অঙ্কুরটা বড়ো হয়ে উঠতে পারত অথচ যেটাকে চেপে দিয়েছে, বাড়তে দেয় নি, তার সেই কচিবেলাকার করুণ ভীরুতা ওর মনে এল । এতদিনে সে ওর সমস্ত জীবনকে অধিকার করে তাকে সফল করতে পারত। কিন্তু সেদিন ওর ছিল জ্ঞানের গর্ব, বিদ্যার একনিষ্ঠ সাধনা, উদ্ধত স্বাতন্ত্র্যবোধ । সেদিন আপন বাপের মুগ্ধতা দেখে ভালোবাসাকে দুর্বলতা বলে মনে-মনে ধিক্কার দিয়েছে । ভালোবাসা আজ তার শোধ নিলে, অভিমান হল ধূলিসাং । সেদিন যা সহজে হতে পারত নিঃশ্বাসের মতো, সরল হাসির মতে, আজ ত কঠিন হয়ে উঠল —সেদিনকার জীবনের সেই অতিথিকে দু-হাত বাড়িয়ে গ্রহণ করতে আজ বাধা পড়ে, তাকে ত্যাগ করতেও বুক ফেটে যায়। মনে পড়ল অপমানিত শোভনলালের সেই কুষ্ঠিত ব্যথিত মূর্তি। তার পরে কতদিন গেছে, যুবকের সেই প্রত্যাখ্যাত ভালোবাসা এতদিন কোন অমৃতে বেঁচে রইল ? আপনারই আন্তরিক মাহাক্স্যে । লাবণ্য চিঠিতে লিখলে, তুমি আমার সকলের বড়ে বন্ধু । এ বন্ধুত্বের পুরো দাম দিতে পারি এমন ধন আজ আমার হাতে নেই। তুমি কোনোদিন দাম চাও নি ; আজও তোমার যা দেবার জিনিস তাই দিতে এসেছ কিছুই দাবি না করে । চাই নে বলে ফিরিয়ে দিতে পারি এমন শক্তি নেই আমার, এমন অহংকারও নেই। চিঠিটা লিখে পাঠিয়ে দিয়েছে এমন সময় অমিত এসে বললে, “বস্তা, চলে। আজ দুজনে একবার বেড়িয়ে আসি গে।” অমিত ভয়ে-ভয়েই বলেছিল, ভেবেছিল লাবণ্য আজ হয়তো যেতে রাজি হবে না ।