পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

v9\ყNo) রবীন্দ্র-রচনাবলী তোমার লেশমাত্র দায় নেই। আমি রাগ করে বলছি নে, আমার সমস্ত ভালোবাসা দিয়েই বলছি, আমাকে তুমি আংটি দিয়ে না, কোনো চিহ্ন রাখবার কিছু দরকার নেই। আমার প্রেম থাক নিরঞ্জন, বাইরের রেখা বাইরের ছায়া তাতে পড়বে না।” (, এই বলে নিজের আঙুলের থেকে আংটি খুলে অমিতর আঙুলে আন্তে আস্তে পরিয়ে দিলে । অমিত তাতে কোনো বাধা দিলে না । সায়াহ্নের এই পৃথিবী যেমন অস্তরশ্মি-উদ্‌ভাসিত আকাশের দিকে নিঃশব্দে আপন মুখ তুলে ধরেছে, তেমনি নীরবে, তেমনি শান্ত দীপ্তিতে লাবণ্য আপন মুখ তুলে ধরলে অমিতর নত মুখের দিকে। {. সাত দিন যেতেই অমিত ফিরে যোগমায়ার সেই বাসায় গেল। ঘর বন্ধ, সবাই চলে গেছে। কোথায় গেছে তার কোনো ঠিকানা রেখে যায় নি। সেই যুক্যালিপটাস গাছের তলায় অমিত এসে দাড়াল, খানিকক্ষণ ধরে শূন্তমনে সেইখানে ঘুরে বেড়ালে। পরিচিত মালী এসে সেলাম করে জিজ্ঞাসা করলে, “ম্বর খুলে দেব কি ? ভিতরে বসবেন ?” অমিত একটু দ্বিধা করে বললে, “ই ।” ভিতরে গিয়ে লাবণ্যর বসবার ঘরে গেল। চৌকি টেবিল শেলফ আছে, সেই বইগুলি নেই। মেজের উপর দুই-একটা ছেড়া শূন্ত লেফাফা, তার উপরে অজানা হাতের অক্ষরে লাবণ্যর নাম ও ঠিকানা লেখা ; দু-চারটে ব্যবহার-করা পরিত্যক্ত নিব, এবং ক্ষয়প্রাপ্ত একটি অতি ছোটো পেনসিল টেবিলের উপরে। পেনসিলটি পকেটে নিলে। এর পাশেই শোবার ঘর। লোহার খাটে কেবল একটা গদি, আর আয়নার টেবিলে একটা শূন্ত তেলের শিশি । দুই হাতে মাথা রেখে অমিত সেই গদির উপর গুয়ে পড়ল, লোহার খাটটা শব্দ করে উঠল। সেই ঘরটার মধ্যে বোবা একটা শূন্ততা । তাকে প্রশ্ন করলে কোনো কথাই বলতে পারে না । সে একটা মূৰ্ছা, ষে-মূৰ্ছ কোনোদিনই আর ভাঙবে না । তার পরে শরীরমনের উপর একটা নিরুস্তমের বোঝা বহন করে অমিত গেল নিজের কুটিরে। যা যেমন রেখে গিয়েছিল তেমনিই সব আছে। এমন কি, যোগমায়া তার কেদারাটিও ফিরিয়ে নিয়ে যান নি। বুঝলে, তিনি স্নেহ করেই এই চোঁকিটি তাকে দিয়ে গেছেন, মনে হল যেন শুনতে পেলে, শাস্ত মধুর স্বরে তার সেই আহ্বান, বাছা । সেই চৌকির সামনে মাথা লুটিয়ে অমিত প্ৰণাম করলে। সমস্ত শিলঙ পাহাড়ের ঐ আজ চলে গেছে। অমিত কোথাও আর সান্ধন C 1 ||