পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

e t রবীন্দ্র-রচনাবলীףס মানসের দিকে যখন যাত্রা করব সেটা হবে আকাশের ফাকা রাস্তায় । জয় হ’ক আমার লাবণ্যর, জয় হ’ক আমার কেতকীর, আর সব দিক থেকেই ধন্ত হ'ক অমিত রায় ।” যতী স্তৰ হয়ে বসে রইল, বোধ করি কথাটা তার ঠিক লাগল না। অমিত তার মুখ দেখে ঈষৎ হেসে বললে, “দেখে ভাই, সব কথা সকলের নয়। আমি যা বলছি, হয়তো সেটা আমারই কথা । সেটাকে তোমার কথা বলে বুঝতে গেলেই ভুল বুঝবে। আমাকে গাল দিয়ে বসবে। একের কথার উপর আরের মানে চাপিয়েই পৃথিবীতে মারামারি খুনোখুনি হয়। এবার আমার নিজের কথাটা স্পষ্ট করেই না হয় তোমাকে বলি। রূপক দিয়েই বলতে হবে নইলে এ-সব কথার রূপ চলে যায়— কথাগুলো লজ্জিত হয়ে ওঠে। কেতকীর সঙ্গে আমার সম্বন্ধ ভালোবাসারই, কিন্তু সে যেন ঘড়ায় তোলা জল, প্রতিদিন তুলবে, প্রতিদিন ব্যবহার করবে। আর লাবণ্যর সঙ্গে আমার যে-ভালোবাসা, সে রইল দিঘি, সে ঘরে আনবার নয়, আমার মন তাতে সাতার দেবে ।” যতী একটু কুষ্ঠিত হয়ে বললে, “কিন্তু অমিতদা, দুটোর মধ্যে একটাকেই কি বেছে নিতে হয় না ?” “যার হয় তারই হয়, আমার হয় না ।” “কিন্তু শ্ৰীমতী কেতকী যদি—” “তিনি সব জানেন । সম্পূর্ণ বোঝেন কি না বলতে পারি নে। কিন্তু সমস্ত জীবন দিয়ে এইটেই তাকে বোঝাব যে, তাকে কোথাও ফাকি দিচ্ছি নে। এও তাকে বুঝতে হবে যে, লাবণ্যর কাছে তিনি ঋণী।" “ত হ’ক, শ্ৰীমতী লাবণ্যকে তো তোমার বিয়ের খবর জানাতে হবে।" “নিশ্চয় জানাব। কিন্তু তার আগে একটি চিঠি দিতে চাই, সেটি তুমি পৌছিয়ে দেবে ?” “দেব ।” অমিতর এই চিঠি : সেদিন সন্ধ্যেবেলায় রাস্তার শেষে এসে যখন দাড়ালুম, কবিতা দিয়ে যাত্র শেষ করেছি। আজও এসে থামলুম একটা রাস্তার শেষে । এই শেষমূহুর্তটির উপর একটি কবিতা রেখে যেতে চাই । আর কোনো কথার ভার সইবে না । হতভাগা নিবারণ চক্রবর্তীট যেদিন ধরা পড়েছে সেইদিন মরেছে—অতি শৌখিন জলচর মাছের মতো । তাই উপায় না দেখে তোমারই কবির উপর ভার দিলুম আমার শেষ-কথাটা তোমাকে জানাবার জন্তে :