পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাজা প্রজ @tyS সহৃদয় ইংরেজও সেজন্য অনেক সময় চিস্তা ও দুঃখ অনুভব করেন । তবু যাহা অসম্ভব যাহা অসাধ্য তাহ লইয়া বিলাপ করিয়া ফল কী ? কিন্তু" বৃহৎ কার্ধ মহং অনুষ্ঠান কবে সহজ মুসাধ্য হইয়াছে ? এই ভারতজয়"ভারতশাসনকার্ষে ইংরেজের যে-সকল গুণের আবগুক হইয়াছে সেগুলি কি সুলভ গুণ ? সে সাহস, সে অদম্য অধ্যবসায়, সে ত্যাগস্বীকার কি স্বল্প সাধনার ধন ? আর পঞ্চবিংশতি কোটি বিদেশীয় প্রজার হৃদয় জয় করিবার জন্য যে দুর্লভ সহৃদয়তাগুণের আবশ্যক তাহ! কি সাধনার যোগ্য নহে ? ইংরেজ কবিগণ গ্রীস ইটালি হাঙ্গেরি পোলাণ্ডের দুঃপে আশ্রমোচন করিয়াছেন, আমরা ততটা অশ্রুপাতের অধিকারী নহি, কিন্তু এ-পর্যন্ত মহাত্মা এডবিন আর্নলড ব্যতীত আর কোনো ইংরেজ কবি কোনো প্রসঙ্গ উপলক্ষে ভারতবর্ষের প্রতি প্রতি ব্যক্ত করেন নাই । বরঞ্চ শুনিয়াছি নিঃসম্পর্ক ফ্রান্সের কোনো কোনো বড়ো কবি ভারতবর্ষীয় প্রসঙ্গ অবলম্বন করিয়া কাব্য রচনা করিয়াছেন । ইহাতে ইংরেজের যতটা অনাত্মীয়তা প্রকাশ পাইয়াছে এমন আর কিছুতেই নহে । ভারতবর্ষ ও ভারতবর্ষীয়দের লইয়া আজকাল ইংরেজি নভেল অনেকগুলি বাহির হইতেছে। শুনিতে পাই আধুনিক অ্যাংলো-ইণ্ডিয়ান লেখকসম্প্রদায়ের মধ্যে রাডইয়ার্ড কিপ্লিং প্রতিভায় অগ্রগণ্য । তাহার ভারতবর্ষীয় গল্প লইয়া ইংরেজ পাঠকের অত্যন্ত মুগ্ধ হইয়াছেন । উক্ত গল্পগুলি পড়িয়া তাহার একজন অসুরক্ত ভক্ত ইংরেজ কবির মনে কিরূপ ধারণা হইয়াছে তাহা পড়িয়াছি । সমালোচনা উপলক্ষে এডমণ্ড গস বলিতেছেন : 师 呜1粤 “এই সকল গল্প পড়িতে পড়িতে ভারতবর্ষীয় সেনানিবাসগুলিকে জনহীন বালুকাসমূত্রের মধ্যবর্তী এক-একটি দ্বীপের মতে বোধ হয় । চারিদিকেই ভারতবর্ষের অপরিসীম মরুময়ত,—অখ্যাত, একঘেয়ে, প্রকাগু—সেখানে কেবল কালা আদমি, পারিয়া কুকুর, পাঠান এবং সবুজবর্ণ টিয়াপাণি, চিল এবং কুম্ভীর, এবং লম্বা ঘাসের নির্জন ক্ষেত্র । এই মরুসমূত্রের মধ্যবর্তী দ্বীপে কতকগুলি যুবাপুরুষ বিধবা মহারানীর কার্য করিতে এবং তাহার অধীনস্থ পূৰ্বদেশীয় ধনসম্পদপূর্ণ বর্বর সাম্রাজ্য রক্ষা করিতে সুদূর ইংলণ্ড হইতে প্রেরিত হইয়াছে।” ইংরেজের তুলিতে ভারতবর্ষের এই শুষ্ক শোভাহীন চিত্র অঙ্কিত দেখিয়া মন নৈরাস্তে বিষাদে পরিপূর্ণ হইয়া যায় । আমাদের ভারতবর্ষ তো এমন নয়। কিন্তু ইংরেজের ভারতবর্ষ কি এত তফাত । ;: