পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SARS) রবীন্দ্র-রচনাবলী ভ্রমণ করিতেন তাহ অতি শোভন ও পবিত্র কিন্তু জ্ঞানবৃক্ষের ফল খাইবার পরে যে-পর্যন্ত না পৃথিবীতে দরজির দোকান বসিয়াছিল সে-পর্যন্ত র্তাহীদের বেশভূষা অম্লীলতানিবারিণী সভায় নিন্দার্হ হইয়াছিল সন্দেহ নাই। আমাদেরও নব-আবরণে লজ্জানিবারণ না করিয়া লজ্জাবৃদ্ধি করিবারই সম্ভব। কারণ, সমস্ত দেশটাকে ঢাকিবার মতো দরজির এস্টাব্লিশমেন্ট এখনও খোলা হয় নাই। ঢাকিতে গিয়া ঢাকা পড়িবে না এবং তাহার মতো বিড়ম্বন আর কিছুই নাই। যাহারা লোভে পড়িয়া সভ্যতাবৃক্ষের এই ফলটি খাইয়া বসিয়াছেন তাহাদিগকে বড়োই ব্যতিব্যস্ত হইয়া থাকিতে হয়। পাছে ইংরেজ দেখিতে পায় আমরা হাতে করিয়া খাই, পাছে ইংরেজ জানিতে পায় আমরা আসনে চৌকা হইয়া বসি, এজন্য কেবলই তাহাদিগকে পর্দা টানিয়া বেড়াইতে হয় । এটিকেটশাস্ত্রে একটু ক্রটি হওয়া, ইংরেজি ভাষায় স্বল্প স্খলন হওয়া তাহারা পাতকরূপে গণ্য করেন এবং স্বসম্প্রদায়ের পরস্পরের মধ্যে সাহেবি আদশের নূ্যনত দেখিলে লজ্জা ও অবজ্ঞা অনুভব করিয়া থাকেন। ভাবিয়া দেখিলে অনাবরণ অপেক্ষ এই অসম্পূর্ণ আবরণে, এই আবরণের নিষ্ফল চেষ্টাতেই প্রকৃত অশ্লীলতা— ইহাতেই যথার্থ আত্মাবমাননা । কতকটা পরিমাণে ইংরেজি ছদ্মবেশ ধারণ করিলে বৈসাদৃশ্বট আরও বেশি জাজ্জল্যমান হইয়া উঠে । তাহার ফলটা বেশ সুশোভন হয় না । সুতরাং রুচিতে দ্বিগুণ আঘাত দেয় । ইংরেজের মনটা অভ্যাসকুহকে নিকটে আকৃষ্ট হওয়াতেই আপনাকে অন্যায় প্রতারিত জ্ঞান করিয়া দ্বিগুণ বেগে প্রতিহত হয় । নব্য জাপান যুরোপীয় সভ্যতায় রীতিমতো দীক্ষিত হইয়াছে । তাহার শিক্ষা কেবল বাহশিক্ষা নহে । কলকারখানা শাসনপ্রণালী বিদ্যাবিস্তার সমস্ত সে নিজের হাতে চালাইতেছে । তাহার পটুতা দেখিয়া যুরোপ বিস্মিত হয় এবং কোথাও কোনো ক্রটি খুজিয়া পায় না কিন্তু তথাপি যুরোপ আপনার বিদ্যালয়ের এই সর্দার পড়েটিকে বিলাতি বেশভূষা-আচারব্যবহারের অল্পকরণ করিতে দেখিলেই বিমুখ ন হইয়া থাকিতে পারে না । জাপান নিজের এই অদ্ভুত কুরুচি, এই হাস্তজনক অসংগতি সম্বন্ধে নিজে একেবারেই অন্ধ। কিন্তু যুরোপ এই ছদ্মবেশী এশিয়াবাসীকে দেপিয়া বিপুল শ্রদ্ধাসত্বেও না হাসিয়া থাকিতে পারে না । আর আমরা কি যুরোপের সহিত অন্য সমস্ত বিষয়েই এতটা দূর একাত্মা হইয়া গিয়াছি যে, বাহ অনৈক্য বিলোপ করিয়া দিলে অসংগতি নামক গুরুতর রুচিদোষ ঘটিবে না ? o এই তো গেল একটা কথা। দ্বিতীয় কথা এই যে, এই উপায়ে লাভ চুলায় যাক,