পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8Ꮌbr রবীন্দ্র-রচনাবলী সুবিচারের অধিকার সংবাদপত্রপাঠকগণ অবগত আছেন অল্পকাল হইল সেতারা জিলায় বাই নামক নগরে তেরো জন সম্রাস্ত হিন্দু জেলে গিয়াছেন। তাহারা অপরাধ করিয়া থাকিবেন, এবং আইনমতেও হয়তো তাহারা দ গুনীয়—কিন্তু ঘটনাটি সমস্ত হিন্দুর হৃদয়ে আঘাত করিয়াছে এবং আঘাতের ন্যায্য কারণও আছে । উক্ত নগরে হিন্দুসংখ্যা মুসলমান অপেক্ষ অনেক অধিক এবং পরস্পরের মধ্যে কোনো কালে কোনো বিরোধের লক্ষণ দেখা যায় নাই। একটি মুসলমান সাক্ষীও প্রকাশ করিয়াছে যে, সে-স্থানে হিন্দুর সহিত মুসলমানের কোনো বিবাদ নাই—বিবাদ হিন্দুর সহিত গবর্মেন্টের । অকস্মাং ম্যাজিস্ট্রেট অশান্তি আশঙ্কা করিয়া কোনো এক পূজা উপলক্ষে হিন্দুদিগকে বাদ্য বন্ধ করিতে আদেশ করেন । হিন্দুগণ ফাপরে পড়িয়া রাজাঞ্জা ও দেবসম্মান উভয়রক্ষা করিতে গিয়া কোনোটাই রক্ষা করিতে পারিলেন না। র্তাহার। চিরনিয়মাতুমোদিত বাদ্যাড়ম্বর বন্ধ করিয়া একটিমাত্র সামান্য বাদ্যযোগে কোনোমতে উংসব পালন করিলেন । ইহাতে দেবতা সস্তুষ্ট হইলেন কিনা জানি না, মুসলমানগণ অসন্তুষ্ট হইলেন না, কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেট রুদ্রমৃতি ধারণ করিলেন । নগরের তেরো জন ভদ্র হিন্দুকে জেলে চালান করিয়া দিলেন। হাকিম খুব জবরদস্ত, আইন খুব কঠিন, শাসন খুব কড়াক্কড়, কিন্তু এমন করিয়া স্থায়ী শান্তি স্থাপিত হয় কিনা সন্দেহ । এমন করিয়া যেখানে বিরোধ নাই সেখানে বিরোধ বাধিয়া উঠে, যেপানে বিদ্বেষের বীজমাত্র আছে সেপামে তাছা অঙ্কুরিত ও পল্লবিত হইয়া উঠিতে থাকে। প্রবল প্রতাপে শাস্তি স্থাপন করিতে গিয়া মহাসমারোহে অশান্তিকে জাগ্ৰত করিয়া তোলা হয়। সকলেই জানেন অনেক অসভ্যদের মধ্যে আর-কোনোপ্রকার চিকিৎসা নাই কেবল ভূতঝাড়ানো আছে। তাহারা গর্জন করিয়া নৃত্য করিয়া রোগীকে মারিয়া ধরিয়া প্রলয়কাও বাধাইয়া দেয়। ইংরেজ হিন্দুমুসলমান-বিরোধব্যাধির যদি সেইরূপ আদিম প্রণালীমতে চিকিৎসা শুরু করেন তাহাতে রোগীর মৃত্যু হইতে পারে কিন্তু ব্যাধির উপশম না হইবার সম্ভাবনা। এবং ওঝা ভূত বাড়িতে গিয়া যে-ভূত নামাইয়া আনেন তাহাকে শাস্ত করা দুঃসাধ্য হইয় উঠে। অনেক হিন্দুর বিশ্বাস, বিরোধ মিটাইয়া দেওয়া গবর্মেন্টের আস্তরিক অভিপ্রায়