পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাজা প্রজা 8○2 রাজভক্তি রাজপুত্র আসিলেন। রাজ্যের যত পাত্রের পুত্র তাহাকে গণ্ডি দিয়া ধিরিয়া বসিল— তাহার মধ্যে একটু ফাক পায় এমন সাধ্য কাহারও রহিল না। এই ফাক যতদূর সম্ভব সংকীর্ণ করিবার জন্য কোটালের পুত্র পাহারা দিতে লাগিল—সেজন্য সে শিরোপা পাইল । তাহার পর ? তাহার পর বিস্তর বাজি পুড়াইয়া রাজপুত্র জাহাজে চড়িয়া চলিয়া গেলেন- এবং আমার কথাটি ফুরাল, নটেশাকটি মুড়াল । ব্যাপারপান কী? একটি কাহিনীমাত্র। রাজ্য ও রাজপুত্রের এই বহুদুর্লভ মিলন যত সুদূর, যত স্বল্প, যত নিরর্থক হওয়া সম্ভব তাহ হইল। সমস্ত দেশ পর্যটন করিয়া দেশকে যত কম জানা, দেশের সঙ্গে যত কম যোগস্থাপন হইতে পারে, তাহা বহু ব্যয়ে বহু নৈপুণ্য ও সমারোহসহকারে সমাধা হইল । অবগুই রাজপুরুষের ইহার মধ্যে কিছু একটা পলিসি, কিছু একটা প্রয়োজন বুঝিয়াছিলেন—নহিলে এত বাজে খরচ করিবেন কেন ? রূপকথার রাজপুত্র কোনো সুপ্ত রাজকন্যাকে জাগাইবার জন্য সাত সমুদ্র তেরো নদী পার হইয়াছিলেন ; আমাদের রাজপুত্রও বোধ করি সুপ্ত রাজভক্তিকে জাগাইবার জন্যই যাত্রা করিয়া থাকিবেন, কিন্তু সোনার কাঠি কি মিলিয়াছিল ? নানা ঘটনায় স্পষ্টই দেখা যাইতেছে, আমাদের রাজপুরুষেরা সোনার কাঠির চেয়ে লোহার কাঠির উপরেই বেশি আস্থা রাপিয়া থাকেন। র্তাহাদের প্রতাপের আড়ম্বরটাকেই র্তাহার। বজ্রগর্ভ বিদ্যুতের মতে ক্ষণে ক্ষণে আমাদের চোথের উপর দিয়া ঝলকিয়া লইয়া যান। তাহাতে আমাদের চোখ ধাধিয়া যায়, হংকম্পও হইতে পারে কিন্তু রাজাপ্রজার মধ্যে অন্তরের বন্ধন দৃঢ় হয় না—পার্থক্য আরও বাড়িয়া যায়। ভারতবর্ষের অদৃষ্টে এইরূপ অবস্থা অবশুম্ভাবী। কারণ, এখানকার রাজাসনে যাহারা বসেন, তাহাদের মেয়াদ বেশিদিনকার নহে, অথচ এপানে রাজক্ষমতা যেরূপ অতুংকট, স্বয়ং ভারতসম্রাটেরও সেরূপ নহে। বস্তুত ইংলণ্ডে রাজত্ব করিবার মুযোগ কাহারও নাই ; কারণ, সেখানে প্রজাগণ স্বাধীন। ভারতবর্ষ যে অধীন রাজ্য, তাহা ইংরেজ এখানে পদার্পণ করিবামাত্র বুঝিতে পারে। সুতরাং এ-দেশে কর্তৃত্বের দম্ভ ক্ষমতার মত্তত সহসা সংবরণ করা ক্ষুদ্রপ্রকৃতির পক্ষে অসম্ভব হইয়া পড়ে । , বনিয়াদি রাজাকে রাজকীয় নেশায় টলাইতে পারে না। হঠাৎ-রাজার পক্ষে এই