পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

88○ রবীন্দ্র-রচনাবলী নাই ; এ কেবল অমুক দলের কীর্তি ; , এ কেবল অমুক লোকের অন্যায় ; আমি পূর্ব হইতেই বলিয়া আসিতেছি এ-সব ভালো হইতেছে না, আমি তো জানিতাম এমনি একটা ব্যাপার ঘটবে ।” কোনো আতঙ্কজনক দুর্ঘটনার পর এই প্রকার অশোভন উৎকণ্ঠার সহিত পরের প্রতি অভিযোগ বা নিজের সুবুদ্ধি লইয়া অভিমান আমার কাছে দুর্বলতার পরিচয় সুতরাং লজ্জার বিষয় বলিয়া মনে হয় । বিশেষত আমরা প্রবলের শাসনাধীনে আছি এইজন্য রাজপুরুষদের বিরাগের দিনে অন্তকে গালি দিয়া নিজেকে ভালোমানুষের দলে দাড় করাইতে গেলে তাহার মধ্যে কেমন একটা হীনতা আসিয়া পড়েই—অতএব দুর্বল পক্ষের এইরূপ ব্যাপারে অতিরিক্ত উৎসাহ প্রকাশ করিতে না যাওয়াই ভালো । EP তাহার পরে, যাহারা অপরাধ করিয়াছে, ধরা পড়িয়ছে, নির্মম রাজদ ও যাহাদের পরে উদ্যত হইয়া উঠিয়াছে, আর-কিছু বিচার না করিয়া কেবলমাত্র বিপদ ঘটাইয়াছে বলিয়াই তাহাদের প্রতি তীব্রতা প্রকাশ করাও কাপুরুষতা । তাহাদের বিচারের ভার এমন হাতে আছে যে, অনুগ্রহ বা মমত্ব সেই হাতকে লেশমাত্র দ গুলাম্ববতার দিকে বিচলিত করিবে না । অতএব ইহার উপরেও আমরা যেটুকু অগ্রসর হইয়া যোগ করিতে যাইব তাহাতে ভীরু স্বভাবের নির্দয়ত প্রকাশ পাইবে । ব্যাপারটাকে আমরা যেমনই দোষাবহ বলিয় মনে করি না কেন, সে-সম্বন্ধে মতপ্রকাশের আগ্রহে আমরা আত্মসন্ত্রমের মর্যাদা লঙ্ঘন করিব কেন ? সমস্ত দেশের মাথার উপরকার আকাশে যখন একটা রুদ্ররোম রক্তবর্ণ হইয়া স্তব্ধ হইয়া রহিয়াছে তপন সেই বস্ত্রধরের সমূপে আমাদের দায়িত্ববিহীন চাপল্য কেবল যে অনাবস্তক তাহা নহে তাহা কেমন এক-প্রকার অসংগত । যিনি নিজেকে যতই দূরদর্শী বলিয়া মনে করুন না এ-কথা আমাদিগকে স্বীকার করিতেই হইবে যে, ঘটনা যে এতদূর আসিয়া পৌছিতে পারে তাহা দেশের অধিকাংশ লোক কল্পনা করে নাই । বৃদ্ধি আমাদের সকলেরই নৃনাধিক পরিমাণে আছে কিন্তু চোর পালাইলে সেই বুদ্ধির যতটা বিকাশ হয় পূর্বে ততটা প্রত্যাশা করা श्वiध्र न1 ।। অবগু, ঘটনা যখন ঘটিয়াছে তখন এ-কথা বলা সহজ যে, ঘটনার সম্ভাবন ছিল বলিয়াই ঘটিয়াছে। এবং অমনি এই সুযোগে আমাদের মধ্যে যাহারা স্বভাবত কিছু অধিক উত্তেজনাশীল তাহাদিগকেও ভংসনা করিয়া বলা সহজ যে, তোমরা যদি এতটা দূর বাড়াবাড়ি না করিতে তবে ভালো হইত।