পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8\yჯ) Q রবীন্দ্র-রচনাবলী অতিক্রম করিয়া কেবল যে জয়ী হইব তাহা নহে, কার্যসিদ্ধির সত্যসাধনাকে দেশের মধ্যে চিরদিনের মতো সঞ্চিত করিয়া তুলিব—আমাদের উত্তরপুরুষদের জন্য শক্তি চালনার সমস্ত পৃথ একটি একটি করিয়া উদঘাটিত করিয়া দিব । আজ ওই যে বলিশালায় লৌহস্থলের কঠোর ঝংকার শুনা যাইতেছে, দণ্ডধারী পুরুষদের পদশৰে কম্পমান রাজপথ মুখরিত হইয়া উঠিতেছে ইহাকেই অত্যন্ত বড়ে করিয়া জানিয়ে না। যদি কান পাতিয়া শোন তবে কালের মহাসংগীতের মধ্যে ইহা কোথায় বিলুপ্ত হইয়া যায়। কত যুগ হইতে বিপ্লবের আবর্ত, কত উৎপীড়নের মন্থন, এ-দেশের সিংহদ্বারে কত বড়ো বড়ে রাজপ্রতাপের প্রবেশ ও প্রস্থানের মধ্য দিয়া ভারতবর্ষের পরিপূর্ণত অভিব্যক্ত হইয়া উঠিতেছে, অদ্যকার ক্ষুদ্র দিন তাহার যে ক্ষুদ্র ইতিহাসটুকু ইহার সহিত মিলিত করিতেছে আর কিছুকাল পরে সমগ্রের মধ্যে তাহ কি কোথাও দৃষ্টিগোচর হইবে । ভয় করিব না, ক্ষুব্ধ হইব না, ভারতবর্ষের যে পরম মহিমা সমস্ত কঠোর দু:খসংঘাতের মধ্যে বিশ্বকবির স্বজনানন্দকে বহন করিয়া ব্যক্ত হইয়া উঠিতেছে—ভক্ত সাধকের প্রশান্ত ধ্যাননেত্রে তাহার অপও মূর্তি উপলব্ধি করিব । চারিদিকের কোলাহল ও চিত্তবিক্ষেপের মধ্যে সাধনাকে মহং লক্ষ্যের দিকে অবিচলিত রাখিব। নিশ্চয় জানিব এই ভারতবর্ষে যুগযুগান্তরীয় মানবচিত্তের সমস্ত আকাঙ্কণবেগ মিলিত হইয়াছে——এইখানেই জ্ঞানের সহিত জ্ঞানের মন্থন হইবে, জাতির সহিত জাতির মিলন ঘটিবে । বৈচিত্রা এপানে অত্যন্ত জটিল, বিচ্ছেদ এপানে অত্যস্ত প্রবন্স, বিপরীতের সমাবেশ এখানে অত্যন্ত বিরোধসংকুল-—এত বহুত্ব এত বেদন এত সংঘাত কোনো দেশই এত দীর্ঘকাল বহন করিয়া বঁচিতে পারিত না-কিন্তু একটি অতিবুহুং অতিমহং সমন্বয়ের পরম অভিপ্রায়ই এই সমস্ত একান্ত বিরুদ্ধতাকে ধারণ করিয়া আছে, পরস্পরের আঘাতে কাহাকেও উংসাদিত হইতে দেয় নাই। এই যে সমস্ত নানা বিচিত্র উপকরণ কালকালাস্তর ও দেশদেশাস্তর হইতে এপানে আহরিত হইয়াছে আমাদের ক্ষুদ্র শক্তিদ্বারা তাহাকে আঘাত করিতে গেলে আমরা নিজেই আহত হুইব, তাহার কিছুই করিতে পারিব না । জানি, বাহির হইতে অন্যায় এবং অল্পমান আমাদের এমন প্রবৃত্তিকে উত্তেজিত করিতেছে, যাহা আঘাত করিতেই জানে, যাঙ্গ ধৈর্য মানে না, যাহা বিনাশ স্বীকার করিয়াও নিজের চরিতার্থতাকেই সার্থকতা বলিয়া জ্ঞান করে । কিন্তু সেই আত্মাভিমানের প্রমত্ততাকে নিবৃত্ত করিবার জন্ত আমাদের অন্তঃকরণের মধ্যে সুগম্ভীর আত্মগৌরব সঞ্চার করিবার অন্তরতর শক্তি কি ভারতবর্ষ আমাদিগকে দান করিবেন না ? যাহার নিকটে আসিয়া আমাদের পরিচয় গ্রহণ করিতে ঘৃণা করে, যাহার দূর হইতে আমাদের প্রতি বিদ্বেষ উদগার করে সেই সকল ক্ষণকালীন বায়ুম্বার স্ফীত সংবাদপত্রের