পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৮৪

8ፃõ রবীন্দ্র-রচনাবলী আঘাতকেও বাচায় তেমনি মিলনকেও ঠেকায়। অশান্তিকে দূরে খেদাইয়া রাখাই ষে শাস্তিকে প্রতিষ্ঠা করা তাহা নহে। বস্তুত তাহাতে অশাস্তিকে চিরদিনই কোনো একটা জায়গায় জিয়াইয়া রাখা হয় ; বিরোধকে কোনোমতে দূরে রাখিলেও তবু তাহাকে রাধা হয়—ছাড়া পাইলেই তাহার প্রলয়মূর্তি হঠাৎ আসিয়া দেখা দেয়। (* শুধু তাই নয়। ব্যবস্থাবদ্ধভাবে একত্রে অবস্থানমাত্র মিলনের নেতিবাচক অবস্থা, ইতিবাচক নহে। তাহাতে মানুষ আরাম পাইতে পারে কিন্তু শক্তি পাইতে পারে না । শৃঙ্খলার দ্বারা কাজ চলে মাত্র, ঐক্যের দ্বারা প্রাণ জাগে । ভারতবর্ষও এতকাল তাহার বহুতর অনৈক্য ও বিরুদ্ধতাকে একটি ব্যবস্থার মধ্যে টানিয়া প্রত্যেককে এক-একটি প্রকোষ্ঠে বদ্ধ করিবার চেষ্টাতেই নিযুক্ত ছিল । অন্ত কোনো দেশেই এমন সত্যকার প্রভেদ একত্রে আসিয়া দাড়ায় নাই, সুতরাং অন্ত কোনো দেশেরই এমন দুঃসাধ্য সাধনে প্রবৃত্ত হইবার কোনো প্রয়োজনই হয় নাই । নানা বিশৃঙ্খল বিচ্ছিন্ন সত্য যখন স্তৃপাকার হইয়া জ্ঞানের পথরোধ করিবার উপক্রম করে তপন বিজ্ঞানের প্রথম কাজ হয় তাহাদিগকে গুণকৰ্ম অনুসারে শ্রেণীবদ্ধ করিয়া ফেলা । কিন্তু কি বিজ্ঞানে কি সমাজে শ্রেণীবদ্ধ করা আরম্ভের কাজ, কলেবরবদ্ধ করাই চূড়ান্ত ব্যাপার। ইটকাঠ চুনসুরকি পাছে লিমিশ্রিত হইয়া পরস্পরকে নষ্ট করে এইজন্ত তাহাদিগকে ভাগ ভাগ করিয়া সাজাইয়া রাপাই ষে ইমারত নিৰ্মাণ করা তাহা নহে । আমাদের দেশেও শ্রেণীবিভাগ হইয়া আছে কিন্তু রচনাকার্য হয় আরম্ভ হয় নাই, নয় অধিকদূর অগ্রসর হইতে পারে নাই। একই বেদনার অন্তভূতির দ্বারা আষ্ঠোপান্ত আবিষ্ট, প্রাণময় রসরক্তময় স্নায়ুপেশীমাংসের দ্বারা অস্থিরাশি যেমন করিয়া ঢাকা পড়ে তেমনি করিয়াই বিধিনিষেধের শুষ্ক কঠিন ব্যবস্থাকে একেবারে আচ্ছন্ন এবং অন্তরাল করিয়া দিয়া যখন একই সরস অনুভূতির নাড়িজাল সমগ্রের মধ্যে প্রাণের চৈতন্তকে ব্যাপ্ত করিয়া দিবে তখনই জানিব মহাজাতি দেহধারণ করিয়াছে। * আমরা যে-সকল দেশের ইতিহাস পড়িয়াছি তাহারা বিশেষ বিশেষ পথ দিয়া নিজের সিদ্ধির সাধনা করিয়াছে। যে বিশেষ অমঙ্গল তাহদের পরিপূর্ণ বিকাশের অন্তরায়, তাহারই সঙ্গে তাহাদিগকে লড়িতে হইয়াছে। একদিন আমেরিকার একটি সমস্ত এই ছিল যে, ঔপনিবেশিকদল এক জায়গায়, আর তাহাদের চালকশক্তি সমূদ্রপারে—ঠিক যেন মাথার সঙ্গে ধড়ের বিচ্ছেদ—এরূপ অসামঞ্জস্ত কোনো জাতির পক্ষে বহন করা অসম্ভব। ভূমিষ্ঠ শিশু যেমন মাতৃগর্তের সঙ্গে কোনো বন্ধনে বাধা থাকিতে পারে না— নাড়ি ছেদন করিয়া দিতে হয়—তেমনি আমেরিকার সম্মুখে ষেদিন এই নাড়ি ছেদনের