পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৯০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8b尺 রবীন্দ্র-রচনাবলী আমরা পরস্পরকে সেই খাস্ত হইতেই বঞ্চিত করিয়া আসিয়াছি। আমাদের সমস্ত হৃদয়বৃত্তি সমস্ত হিতচেষ্টা, পরিবার ও বংশের মধ্যে, এবং এক-একটি সংকীর্ণ সমাজের মধ্যে এতই অতিশয় পরিমাণে নিবদ্ধ হইয়া পড়িয়াছে যে, সাধারণ মানুষের সঙ্গে সাধারণ আত্মীয়তার ষে বৃহৎ সম্বন্ধ তাহাকে স্বীকার করিবার সম্বল আমরা কিছুই উদ্ভূত্ত রাধি নাই। সেই কারণে আমরা দ্বীপপুঞ্জের মতোই খণ্ড খণ্ড হইয়া আছি, মহাদেশের মতো ব্যাপ্ত বিস্তৃত ও এক হইয়া উঠিতে পারি নাই । প্রত্যেক ক্ষুদ্র মানুষটি বৃহৎ মানুষের সঙ্গে নিজের ঐক্য নানা মঙ্গলের দ্বারা নানা আকারে উপলব্ধি করিতে থাকিবে । এই উপলব্ধি তাহার কোনো বিশেষ কাৰ্যসিদ্ধির উপায় বলিয়াই গৌরবের নহে, ইহা তাহার প্রাণ, ইহাই তাহার মনুষ্যত্ব অর্থাৎ তাহার ধর্ম। এই ধর্ম হইতে সে ষে-পরিমাণেই বঞ্চিত হয় সেই পরিমাণেই সে শুষ্ক হয় । আমাদের দুর্ভাগ্যক্রমে বহুদিন হইতেই ভারতবর্ষে আমরা এই শুষ্কতাকে প্রশ্রয় দিয়া আসিয়াছি । আমাদের জ্ঞান, কর্ম, আচারব্যবহারের, আমাদের সর্বপ্রকার আদানপ্রদানের বড়ে বড়ে রাজপথ এক-একটা ছোটো ছোটাে ওলীর সম্মুণে আসিয়া পণ্ডিত হইয়া গিয়াছে, আমাদের হৃদয় ও চেষ্টা প্রধানত আমাদের নিজের ঘর নিজের গ্রামের মধ্যেই ঘুরির বেড়াইয়াছে, তাহ বিশ্বমানবের অভিমূপে নিজেকে উদঘাটিত করিয়া দিবার অবসর পায় নাই । এই কারণে আমরা পারিবারিক আরাম পাইয়াছি, ক্ষুদ্র সমাজের সহায়তা পাইয়াছি কিন্তু বৃহৎ মানুষের শক্তি ও সম্পূর্ণত হইতে আমরা অনেকদিন হইতে বঞ্চিত হইয়া দীনহীনের মতো বাস করিতেছি । সেই প্রকাগু অভাব পূরণ করিবার উপায় আমরা নিজের মধ্যে হইতেই যদি বাধিয়া তুলিতে না পারি তবে বাহির হইতে তাহ পাইব কেমন করিয়া ? ইংরেজ চলিয়া গেলেই আমাদের এই ছিদ্র পূরণ হইবে আমরা এ কল্পনা কেন করিতেছি ? আমরা যে পরস্পরকে শ্রদ্ধা করি নাই, সহায়তা করি নাই, আমরা যে পরম্পরকে চিনিবার মাত্রও চেষ্টা করি নাই, আমরা যে এতকাল "স্বর হইতে আঙিন বিদেশ" করিয়া বসিয়া আছি –পরম্পর সম্বন্ধে আমাদের সেই ঔদাসীন্ত, অবজ্ঞ, সেই বিরোধ আমাদিগকে যে একান্তই ঘুচাইতে হুইবে সে কি কেবলমাত্র বিলাতি কাপড় ত্যাগ করিবার সুবিধা হইবে বলিয়া, সে কি কেবলমাত্র ইংরেজ কর্তৃপক্ষের নিকট নিজের শক্তি প্রচার করিবার উদেশে ? এ নহিলে আমাদের ধর্ম পীড়িত হইতেছে, আমাদের মহন্তস্থ সংকুচিত হইতেছে ; এ নহিলে আমাদের বুদ্ধি সংকীর্ণ হইবে, আমাদের জ্ঞানের বিকাশ হইবে না—আমাদের দুর্বল চিত্ত শত শত অঙ্গসংস্কারের দ্বারা জড়িত হইয়া থাকিবে—আমরা আমাদের অন্তর-বাহিরের সমস্ত অধীনতার বন্ধন ছেদন করিয়া