পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সমূহ (?)> তেমন উপায় পৃথিবীতে নাইও। আমরা কোনো শ্রেয় পদার্থকেই পরের কৃপার দ্বারা পাই না, নিজের শক্তির দ্বারাই লই। ইহার অন্যথা হইতেই পারে না। কারণ, বিধাত। বরঞ্চ আমাদিগকে হনন করিতে পারেন কিন্তু মচুন্যত্বকে অপমানিত হইবার পথে "কোনো প্রশ্রয় দেন না । সেইজন্তই দেখিতে পাই গবর্মেন্টের দানের সঙ্গে যেখানেই আমাদের শক্তির কোনো সহযোগিতা নাই সেখানে সেই দানই বক্র হইয়া উঠিয়া আমাদের কত না বিপদ ঘটাইতে পারে। প্রশ্রয়প্রাপ্ত পুলিস যখন দক্ষ্যবৃত্তি করে তখন প্রতিকার অসম্ভব হইয়া উঠে ; গবর্মেন্টের প্রসাদভোগী পঞ্চায়েত যখন গুপ্তচরের কাজ আরম্ভ করে তখন গ্রামের পক্ষে তাহা ষে কতবড়ো উপদ্রবের কারণ হইতে পারে তাহ কিছুই বলা যায় না ; গবর্মেন্টের চাকরি যখন শ্রেণীবিশেষকেই অনুগ্রহভাজন করিয়া তোলে তখন ঘরের লোকের মধ্যেই বিদ্বেষ জলিয় উঠে এবং রাজমন্ত্রিসভায় যখন সম্প্রদায়বিশেষের জন্যই আসন প্রশস্ত হইতে থাকে তখন বলিতে হয় আমার উপকারে কাজ নাই তোমার অনুগ্রহ ফিরাইয়৷ লও । আমাদের নিজের মধ্যে সতেজ শক্তি থাকিলে এই সমস্ত বিকৃতি কিছুতেই ঘটিতে পারিত না—আমরা দান গ্রহণ করিবার ও তাহাকে রক্ষা করিবার অধিকারী হইতাম—দান আমাদের পক্ষে কোনো অবস্থাতেই বলিদান হইয়া উঠিত না । অতএব আমি যাহা বলিতেছি তাহাতে এ বোঝায় না যে, আমাদের কর্মের কোনো উপকরণ আমরা গবর্মেন্টের নিকট হইতে লইব না, কিন্তু ইহাই বুঝায় যে, নিজের সম্পূর্ণ সাধামত যদি কর্মে প্রবৃত্ত হই তবেই তাহার উপকরণ আমরা সকল স্থান হইতেই অসংকোচে সংগ্ৰহ করিবার অধিকারী হুইব । নতুবা আমাদের সেই গল্পের দশ ঘটিবে। আমরা মা কালীর কাছে মহিষ মানত করিবার বেল চিস্তা করিব না বটে কিন্তু পরে তিনি যপন অনেক ক্ষমা করিয়াও একটিমাত্র পতঙ্গ দাবি করিবেন তখন বলিব, মা, ওটা তুমি নিজে ক্ষেত্রে গিয়া ধরিয়া লও গে। আমরাও কথার বেলায় বড়ো বড়ে করিয়াই বলিব কিন্তু অবশেষে দেশের একটি সামান্ত হিতসাধনের বেলাতেও অন্যের উপরে বরাত দিয়া দায় সারিবার ইচ্ছা করিব। কাজে প্রবৃত্ত হইতে গেলে, রাগ করিয়া, গর্ব করিয়া, বা অন্ত কারণে, ষে-জিনিসটা নিশ্চিত আছে তাহাকে নাই বলিয়া হিসাব হইতে বাদ দিয়া বসিলে চলিবে না । ভারতে ইংরেজ-গবর্ষেন্ট যেন একেবারেই নাই এমনভাবে চক্ষু মুত্রিত করিয়া থাকা শয়নাগারেই চলে কিন্তু কৰ্মক্ষেত্রে সেরূপভাবে চলিলেই নিশ্চয় ঠকিতে হইবে। অবষ্ট এ-কথাও সত্য, ইংরেজও যতদূর সম্ভব, এমনভাবে চলিতেছে যেন আমরা কোথাও নাই। আমাদের ত্ৰিশ কোটি লোকের মাঝখানে থাকিয়াও তাহারা বহুদূরে।