পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী دروس ) দোষীদিগকে নহে, বিদ্রোহী জেলার অধিবাসিবর্গকে একেবারে সর্বসমেত সমুদ্রপারে দ্বীপান্তরিত করিয়া দিবার জন্য গবর্মেন্টকে অনুরোধ করিলেন । মনে একবার ভয় ঢুকিলে বিচারও থাকে না, দয়াও থাকে না। আমাদের সংস্কৃতশাস্ত্রে আছে—শক্তস্ত ভূষণং ক্ষম । কেবল ভূষণ কেন, তাহ স্বাভাবিক বলিলেওঁ নিতান্ত অত্যুক্তি হয় না। যেখানে মনে মনে আত্মশক্তির অভাব আশঙ্কা হয়, সেখানে মানুষ, হয় অগত্যা ক্ষমা করে, নয় লেশমাত্র ক্ষমা করে না, নিষ্ঠুরভাবে অন্তকে ভয় দেখাইতে চেষ্টা করে। অনেক সময় হিংস্র পশু যে অগ্রসর হইয়। আক্রমণ করে, সকলেই জানেন ভয়ই তাহার মূল কারণ, হিংশ্রত নহে। ইংরেজ যখন কোনো কারণে আমাদিগকে ভয় করে তখনই সেটা আমাদের পক্ষে বড়ো ভয়ের বিষয় হইয়া দাড়ায়—তখনই ভয়ের কম্পনে দয়ামায়া সুবিচার আপাদমস্তক টলমল করিতে থাকে । ইংরেজ হঠাৎ কনগ্রেসের মূর্তি দেখিয়া প্রথমটা আচমকা ডরাইয়া উঠিয়াছিল। তাহার কারণ, মানুষ চিরসংস্কারবশত স্বদেশী জুজুকে যতটা ভয় করে, বিদেশী বিভীষিকাকে ততটা নহে। এইজন্য ভারতবর্ষের সুপশয়নাগারে হঠাৎ সেই পোলিটিকাল জুজুর আবির্ভাব দেখিয়া ইংরেজের সুস্থ প্লীহাও চমকিয়৷ উঠিয়াছিল । কিন্তু কনগ্রেসটার উপরে প্রত্যক্ষভাবে কোনোরূপে আঘাত করা হয় নাই । তাহার কারণ, ঢাকের উপরে ঘা মারিলে ঢাক আরও বেশি করিয়া বাজিয়া উঠে । কনগ্রেসের আর-কোনো ক্ষমতা থাক্ বা না থাকু গলার জোর আছে, তাহার শব্দ সমুদ্রপার পর্যন্ত গিয়া পৌঁছে। সুতরাং এই নবনির্মিত জাতীয় জয়ঢাকটার উপরে কাঠি না মারিয়া তাহাকে তলে তলে ছিদ্র করিবার আয়োজন করা হইল। মুসলমানের প্রথমে কনগ্রেসে যোগ দিবার উপক্রম করিয়া সহসা যে বিমুখ হইয়া দাড়াইল তাহার কারণ বোঝা নিতান্ত কঠিন নহে–এবং পাঠকদের নিকট সে-কারণ স্পষ্ট করিয়া নির্দেশ করা অনাবশ্বক বোধ করি । * কিন্তু এতদিনে ইংরেজ এ-কথা কতকটা বুঝিয়া থাকিবে যে, হিন্দুর হস্তে পলিটিক্স তেমন মারাত্মক নহে। আবহমান কালের ইতিহাস অনুসন্ধান করিয়া দেখিলেও ভারতবর্ষে পোলিটিকাল ঐক্যের কোনো লক্ষণ কোনোকালে দৃষ্টিগোচর হয় না। ঐক্য কাহাকে বলে মুসলমান তাহ জানে এবং পলিটিক্সও তাহার প্রকৃতিবিরুদ্ধ নহে ; মুসলমান যদি দূরে থাকে তবে কনগ্রেস হইতে আগু আশঙ্কার কোনো কারণ নাই । হিন্দুজাতির প্রতি পলিটিক্সের প্রভাব যে তেমন প্রবল নহে কনগ্রেগই তাহার