পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৬০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(tన8 参 রবীন্দ্র-রচনাবলী মধ্যে যথার্থই পার্থক্য বিদ্যমান। সেই পার্থক্য অতিক্রম করিয়া, এমন কি, সেই পার্থক্যবশতই পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা আকর্ষণ কবে ঘটিবে, তাহা বিধাতা জানেন । কিন্তু ইতিমধ্যে অত্যুক্তি ও মিথ্যার দ্বারা অন্ধত, অবিচার ও নিষ্ঠুরতা স্বষ্টি করিতেছে । বস্তুত এই অন্ধতা নেশনতন্ত্রেরই মূলগত ব্যাধি। মিথ্যা দ্বারাই হউক, ভ্রমের দ্বারাই হউক, নিজেদের কাছে নিজেকে বড়ো করিয়া প্রমাণ করিতেই হইবে এবং সেই উপলক্ষ্যে অন্য নেশনকে ক্ষুদ্র করিতে হইবে, ইহা নেশনের ধর্ম, ইহা প্যাট্রিয়টিজমের প্রধান অবলম্বন। গায়ের জোর, ঠেলাঠেলি, অল্পায় ও সর্বপ্রকার মিথ্যাচারের হাত হইতে নেশন-তন্ত্রকে উপরে তুলিতে পারে, এমন সভ্যতার নিদর্শন তো আমরা এখনও যুরোপে দেখিতে পাই না । পরস্পরকে যথার্থরূপ জানাগুন কেমন করিয়া সম্ভব হইবে ? নেশনের মেরুদণ্ডই যে স্বার্থ। স্বার্থের বিরোধ অবশুম্ভাবী, এবং স্বার্থের সংঘাতে মানুষকে অন্ধ করিবেই। ইংরেজ যদি স্বদুর এশিয়ায় কোনোপ্রকার সুযোগ ঘটাইতে পারে, ফ্রান্স তখনই সচকিত হইয়া ভাবিতে থাকিবে, ইংরেজের বলবৃদ্ধি হইতেছে। প্রত্যক্ষ সংঘাত না হইলেও, পরম্পরের সমৃদ্ধিতেও পরস্পরের চিত্তকে বিষাক্ত করে । এক নেশনের প্রবলত্ব অষ্ঠ নেশনের পক্ষে সর্বদাই আশঙ্কাজনক । এ-স্থলে বিরোধ, বিদ্বেষ, অন্ধতা, মিথ্যাপবাদ, সত্যগোপন, এ-সমস্ত না ঘটিয়া থাকিতে পারে না। সমাজের পক্ষে উদারতা সহজ। হিন্দুরা বলে, স্ব স্ব ধর্ম পালন করাই পুণ্য। অবস্থাভেদে আচারব্যবহারের পার্থক্য ঘটতেই পারে এবং সে-পার্থক্য পরস্পরের পক্ষে মঙ্গলেরই কারণ, এ-কথা শাস্তচিত্তে নির্মলঞ্জানে অনুধাবন করিয়া দেখা যায় এবং ভিন্ন সমাজের প্রতি শ্রদ্ধাসম্মান সম্পূর্ণ রক্ষা করিয়াও স্বসমাজের কর্তব্যপালন করা কঠিন হয় না। সামাজিক উন্নতিতে মামুষের চারিত্রগত উন্নতি হয়—সে উন্নতিতে কাহারও সহিত স্বার্থের বিরোধ ঘটে না । সর্বপ্রকার বিদ্বেষ, অসত্য, হিংসা সেই উন্নতির প্রতিকূল। সম্ভাব ও সত্যই সমাজের মূল আশ্রয়। নেশন অনেক সময় ধর্মকে উপেক্ষা ও উপহাস করা আবশ্যক বলিয়া জ্ঞান করে, বাহুবলকে ছায়ধর্মের অপেক্ষা বড়ো বলিয়া স্পষ্টতই ঘোষণা করে—সমাজ কদাপি তাহা করিতে পারে না; কারণ ধর্মই তাহার একমাত্র অবলম্বন, স্বার্থকে সর্বদা সংযত করাই তাহার আত্মরক্ষার একমাত্র উপায় । আমরা যদি বাধিবোলে না ভূলি, যদি 'প্যাটিয়টিকেই সর্বোচ্চ বলিয়া না মনে করি, যদি সত্যকে, স্যায়কে, ধর্মকে, দ্যাশনালত্বের অপেক্ষাও বড়ো বলিয়া জানি, তবে আমাদের ভাবিবার বিষয় বিস্তর আছে। আমরা নিকৃষ্ট আদর্শের আকর্ষণে কপটতা, প্রবঞ্চনা ও