পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৬৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬৫৩ কাজের হাওয়া দিবামাত্ৰই স্বভাবের নিয়মে সর্ব-প্ৰথমে নেতাকে ডাক পড়িবেই। সেই ডাকে প্ৰথম ধাক্কায় বাজারে ছোট-বড়ো বঁটা-খাটি বহুবিধ নেতার আমদানি হয় এবং লোকে প্ৰাণের গরজে বিচার করিবার সময় পায় না, নেতা লইয়া টানাটানি-কাড়াকড়ি করিতে থাকে । ইহাতে করিয়া অনেক মিথ্যার, অনেক কৃত্রিমতার সৃষ্টি হয়, কিন্তু ইহার মধ্যে আসল সত্যটুকু এই যে, অামাদের নিতান্তই নেতা চাই—নহিলে আমাদের আশা-উদ্যম-আকাজা সমস্ত ব্যৰ্থ হইয়া যাইতেছে । যাহা হউক, একদিন যখন নেতাকে ডাকি নাই, কেবল বক্তৃতাসভার সভাপতিকে খুজিয়াছিলাম, সেদিন গেছে ; তার পরে একদিন যখন “নেতা নেতা” করিয়া উন্মত্ত হইয়া উঠিয়াছিলাম, সেদিনও আজ নাই ; অতএব আজ অপেক্ষারত স্থিরচিত্তে আমাদের একজন দেশনায়ক বরণ করিয়া লইবার প্রস্তাব পুনৰ্বার সর্বসমক্ষে উথাপন করিবার সময় হইয়াছে বলিয়া অনুভব করিতেছি । এ-সম্বন্ধে আজ কেবল যে অামাদের বোধশক্তি পরিষ্কার হইয়াছে, তাহা নহে, আমাদের ক্ষেত্ৰ প্ৰস্তুত হইয়াছে এবং দেশের হৃদয় নানা আন্দোলনের ও নানা পরিভ্ৰমণের পরেও অবশেয়ে যাঁহাকে নেতা বলিয়া স্বীকার করিতে চাহে, তাহার পরিচয় অদ্য যেন পরিবটতর হইয়া উঠিয়াছে। আমি জানি, এই সভাস্থলে দেশনায়ক বলিয়া আমি যাহার নাম লইতে উদ্যত হইয়াছি, তাহার নাম আজ কেবল বাংলাদেশে নহে, ভারতবর্ষের সর্বত্ৰ ধ্বনিত হইয়া উঠিয়াছে । আমি জানি, আজ বঙ্গলক্ষ্মী যদি স্বয়ংবরা হইতেন, তবে তঁহারই কণ্ঠে বরমালা পড়িত । ব্ৰাহ্মণের ধৈৰ্ষ ও ক্ষত্ৰিয়ের তেজ হাতে একত্ৰে মিলিত, যিনি সরস্বতীর নিকট হইতে বাণী পাইয়াছেন এবং যাহার অক্লান্ত কৰ্মপটুতা স্বয়ং বিশ্বলক্ষ্মীর দান—অাজ বাংলাদেশের দুৰ্যোগের দিনে যাহারা নেতা বলিয়া খ্যাত, সকলের উপরে যাহার মস্তক অভ্ৰভেদী গিরিশিখরের মতো বজ্ৰগৰ্ভ মেঘপুঞ্জের মধ্যে জাগিয়া উঠিয়াছে, সেই সুরেন্দ্ৰনাথকে সকলে মিলিয়া প্ৰকাশ্যভাবে দেশনায়কৰূপে বরণ করিয়া লইবার জন্য আমি সমস্ত বঙ্গবাসীকে আহবান করিতেছি। সুরেন্দ্ৰনাথ তাহার নবযৌবনের জ্যোতিঃপ্ৰদীপ্ত প্ৰভাতে দেশহিতের জাহাজে হাল ধরিয়া যেদিন যাত্ৰা আরম্ভ করিয়াছিলেন, সেদিন ইংরেজিশিক্ষাগ্ৰস্ত যুবকগণ একটিমাত্ৰ বন্দরকেই আপনাদের গম্যস্থান বলিয়া স্থির করিয়াছিলেন—সেই বন্দরের নাম রাজপ্ৰসাদ । সেখানে আছে সবই—লোকে যাহা কিছু কামনা করিতে পারে, অল্পবস্ত্ৰ-পদমান সমস্তই রাজভাণ্ডারে বোঝাই করা হিয়াছে।