পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৬৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গ্রন্থপরিচয় Se(ts হয়, তবে তাছার সঙ্গে গায়ে পড়িয়া আড়ি করিয়া দেশের অহিত করিবার অধিকার আমাদের কাহারও নাই। যদি য়ুনিভর্সিটি অসম্পূর্ণ হয়, যদি তাহ আমাদিগকে অভীষ্টকল দান না করে, তবে তাহাকে বর্জন করাকে বয়কট করা বলে না । যে মনিব বেতন দেয় না, তাহার কর্ম ছাড়িয়া দেওয়াকে বয়কট করা বলে না । কচ দৈত্যগুরুর আশ্রমে আসিয়া দৈত্যদের উৎপীড়ন ও গুরুর অনিচ্ছাসত্বেও ধৈর্য ও কৌশল অবলম্বনপূর্বক বিদ্যালাভ করিয়া দেবগণকে জয়ী করিয়াছেন । জাপান ও যুরোপের আশ্রম হইতে এইরূপ কচের মতোই বিদ্যালাভ করিয়া আজ জয়যুক্ত হইয়াছেন । দেশের যাহাতে ইষ্ট, তাহ যেমন করিয়াই হউক সংগ্ৰহ করিতে হইবে, সেজন্য সমস্ত সহ করা পৌরুষেরই লক্ষণ --তাহার পর সংগ্রহকার্য শেষ হইলে স্বাতন্ত্র্যপ্রকাশ করিবার দিন আসিতে পারে। দেশের কাজে রাগারগিটা কখনোই লক্ষ্য হইতে পারে না । দেশের কাজের মাহাত্ম্য যদি আমরা মনের মধ্যে ধারণ করিয়া রাখিতে পারি, তবে তাহারই উদ্দেশে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উত্তেজনা আমরা উপেক্ষা করিয়া কর্তব্যপথে স্থির থাকিতে পারিব । আমাদের সৌভাগ্যক্রমে, দেশে স্বদেশী উদযোগ আজ যে এমন ব্যাপ্ত হইয়া পড়িয়াছে, বয়কট তাহার প্রাণ নহে। একটা তুচ্ছ কলহের ভাব কখনোই দেশের অস্তঃকরণকে এমন করিয়া টানিতে পারিত না । এই ষে স্বদেশী উদযোগের আহ্বানমাত্রে দেশ একমুহূর্তে সাড়া দিয়াছে, কার্জনের সঙ্গে আড়ি তাহার কারণ হইতেই পারে না ; জগতে কার্জন এতবড়ো লোক নহে ; এই আহবান দেশের শুভবুদ্ধির সিংহদ্বারে আঘাত করিয়াছিল বলিয়াই আজ ইহা এত দ্রুত এমন সমাদর পাইয়াছে। আজ আমরা দেশের কাপড় পরিতেছি কেবল পরের উপর রাগ করিয়া, এই যদি সত্য হয়, তবে দেশের কাপড়ের এতবড়ে অবমাননা আর হইতেই পারে না । আজ আমরা স্বায়ত্তভাবে দেশের শিক্ষার উন্নতিসাধনে প্রবৃত্ত হইয়াছি, রাগারাগিই যদি তাহার ভিত্তিভূমি হয়, তবে এই বিদ্যালয়ে আমরা জাতীয় অগৌরবের স্মরণস্তম্ভ রচনা করিতেছি। আরও লজ্জার কারণ এই যে, বয়কটের মধ্যে আমরা যে স্পর্ধা প্রকাশ করিতেছি, সেই স্পর্ধার শক্তিটা কোথায় অবস্থিত ? সে কি আমাদের নিজের গায়ের জোরে, না ইংরেজশাসনতন্ত্রের ক্ষমাগুণে ! যখনই সেই ক্ষমাগুণের লেশমাত্র বৈলক্ষণ্য দেখি, যখনই মানবধর্মবশত স্পর্ধার বিরুদ্ধে ক্ষমতাশালীর আক্রোশ আইনের বেড়ার কোনো-একটা অংশ একটুমাত্র আলগা করিয়া ফেলে,