পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২০৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শেষরক্ষা Y SA গদাই । না ভাই, প্যাথলজি স্টাডি করবার পক্ষে তোদের সংসৰ্গটা একেবারেই ব্যর্থ নয় । তোদের হৃদয়টা যে সর্বদাই আইচাই করছে, সেটা অজীর্ণ রোগের একটি নামান্তর তা জানিস ? বেশ ভালো করে আহারটি করলে এবং সেটি হজম করতে পারলে কবিতরোগ। কাছে ঘেঁষতে পারে না । আধ-পেটা করে খাও, অম্বলের ব্যামোটি বাধাও, আর অমনি কোথায় আকাশের চাদ, কোথায় দক্ষিণের বাতাস, কোথায় কোকিলপক্ষীর ডাক, এই নিয়ে প্ৰাণ আনচান করতে থাকে ; জানলার কাছে বসে বসে মনে হয় কী যেন চাও, যা চাও সেটি যে বাই-কার্বোনেট-অফ-সোডা তা কিছুতেই বুঝতে পার না । চন্দ্ৰকান্ত । হৃদযন্ত্রটির বাসা পাকযন্ত্রের ঠিক উপরেই, এ কথা কবিরা মানে না, কিন্তু কবিরাজরা NR গদাই । ঐ যে যাকে ভালোবাসা বল সেটা যে শুদ্ধ একটা স্নায়ুর ব্যামো, তার আর সন্দেহ নেই। আমার বিশ্বাস অন্যান্য ব্যামের মতো তারও একটা ওষুধ বের হবে । চন্দ্ৰকান্ত । হবে বৈকি ! কাগজে বিজ্ঞাপন বেরোবে- “হৃদয়-বেদনার জন্য অতি উত্তম মালিশ, উত্তম মালিশ, উত্তম মালিশ ! বিরহানিবারণী বটিকা ; রাত্রে একটি সকালে একটি সেবন করিলে বিরহাভার একেবারে নিঃশেষে অবসান ।” আচ্ছা, ভাই বিনু এক কথায় বলে দে দেখি কিরকম মেয়ে তোর পছন্দ । বিনোদ । আমি কিরকম চাই জান ? যাকে কিছু বোঝবার জো নেই । যাকে ধরতে গেলে পালিয়ে যায়, পালাতে গেলে যে ধরে টেনে নিয়ে আসে । চন্দ্ৰকান্ত.। বুঝেছি । যে কোনো কালেই পুরোনো হবে না । মনের কথা টেনে বলেছ ভাই ! পাওয়া শক্ত । আমরা ভুক্তভোগী, জানি কিনা, বিয়ে করলেই মেয়েগুলো দুদিনেই বহুকেলে পড়া পুঁথির মতো হয়ে আসে ; মলাটটা আধখানা ছিড়ে ঢল ঢলা করছে, পাতাগুলো দাগি হয়ে খুলে আসছে, কোথায় সে আঁটিসাট বাধুনি, কোথায় সে সোনার জলের ছাপ । আচ্ছা, সে যেন হল, আর চেহারা কেমন ? বিনোদ । ছিপছিপে, মাটির সঙ্গে অতি অল্পই সম্পর্ক, যেন সঞ্চারিণী পল্লবিনী লতেব । চন্দ্ৰকান্ত । আর বেশি বলতে হবে না, বুঝে নিয়েছি ! তুমি চাও পদ্যের মতো চােব্দটি অক্ষরে বাধা ছাদা, চলতে ফিরতে ছন্দটি রেখে চলে ২ এ দিকে মল্লিনাথ, ভারত শিরোমণি, জগন্নাথ তর্কপঞ্চানন তার টিকে-ভাষ্য করে থাই পায় না । বুঝেছি বিনন্দা, চাইলেই তো পাওয়া যায় না বিনোদ । কেন, তোমার কপালে তো মন্দ জোটে নি । চন্দ্ৰকান্ত । মন্দ বলতে সাহস করি নে, কিন্তু ভাই, সে গদ্য, তাতে ছাদ নেই, চিল কলমে লেখা ! গদাই । আর ছাদে কােজ নেই ভাই ! আবার তোমার কিরকম ছাদ সেটাও তো দেখতে হবে । চন্দ্ৰকান্ত । তোরা বুঝবি নে, গদাই, ভিতরে গীতগোবিন্দের অল্প একটু আমেজ আছে ; সুযোগ ঘটলে ললিতলবঙ্গলতার সঙ্গে ছন্দের মিল হতেও পারত । চাদের আলোয় মুখের দিকে চেয়ে বেলফুলের মালা হাতে প্ৰেয়সী যদি বলত— জনম অবধি হাম রূপ নেহারানু নয়ন না। তিরপিতা ভেল

  • கூ

নেহাত অসহ্য হত না । প্ৰেয়সী সর্বদা এসেও থাকেন, কিছুই যে বলেন না। এত বড়ো বদনাম দিতে পারব না । কিন্তু বাক্যগুলো, বিশেষত তার সুরাটা এমনটি হয় না গৌড়জন যাহে আনন্দে করবে। পান সুবা নিরবধি ! গদাই ! দেখো চন্দারদা, বিয়ে করবার প্রসঙ্গে পছন্দ করার কথাটা একেবারেই খাটে না ; বিয়েটা হল মনোখিইজম আর পছন্দটা হল পলিথিীইজম । দুটাের থিওলজি একেবারে উলটাে । বিয়ের ডেফিনিশনই হচ্ছে জন্মের মতো পছন্দ-বায়ুটাকে খতম করে দেওয়া । তেত্ৰিশ কোটিকে একের মধ্যে নিঃশেবে বিসর্জন করা ।