পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

లిరిల রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী তাহার উপরে ময়লা কাপড় চাপা দিলেন, তাহার উপরে বালকের লাটাই লাঠি লাঠিম ঝিনুক কঁচের টুকরা প্ৰভৃতি সমস্তই রাখিলেন এবং সর্বোপরি তাহার উপহারগুলি ও দশ টাকার নোটটি সাজাইয়া রাখিলেন । কিন্তু পরের দিন সেই ব্ৰাহ্মণবালকের কোনো উদ্দেশ পাওয়া গেল না । গ্রামের লোকেরা বলিল, তাহাকে দেখে নাই ; পুলিস বলিল, তাহার সন্ধান পাওয়া যাইতেছে না । তখন শরৎ বলিলেন, “এইবার নীলকান্তের বাক্সট পরীক্ষা করিয়া দেখা যাক ৷” কিরণ জেদ করিয়া বলিলেন, “সে কিছুতেই হইবে না ।” বলিয়া ব্যাক্সটি আপন ঘরে আনাইয়া দোয়াতটি বাহির করিয়া গোপনে গঙ্গার জলে ফেলিয়া আসিলেন । শরৎ সপরিবারে দেশে চলিয়া গেলেন ; বাগান একদিনে শূন্য হইয়া গেল । কেবল নীলকান্তের সেই পোষা গ্ৰাম্য কুকুরটা আহার ত্যাগ করিয়া নদীর ধারে ধারে ঘুরিয়া ঘুরিয়া খুঁজিয়া খুঁজিয়া কঁাদিয়া ফাল্পন S \OO

”にイ

1 భాగr; পল্লীবাসিনী কোনো-এক হতভাগিনীর অন্যায়কারী অত্যাচাই স্বামীর দুস্কৃতিসকল সবিস্তারে বর্ণনপূর্বক প্রতিবেশিনী তারা অত্যন্ত সংক্ষেপে নিজের রায় প্রকাশ কবিয়া কহিল, “ এমন স্বামীর মুখে আগুন ।” শুনিয়া জয়গোপালবাবুর স্ত্রী শশী অত্যন্ত পীড়া অনুভব করিলেন— স্বামীজাতির মুখে চুরািটর আগুন ছাড়া অন্য কোনো প্রকার আগুন কোনো অবস্থাতেই কামনা করা স্ত্রীজাতিকে শোভা পায় না ; অতএব এ সম্বন্ধে তিনি কিঞ্চিৎ সংকোচ প্ৰকাশ করাতে কঠিন হৃদয় তারা দ্বিগুণ উৎসাহের সহিত কহিল, “এমন স্বামী থাকার চেয়ে সাতজন্ম বিধবা হওয়া ভালো ।” এই বলিয়া সে সভাভঙ্গ করিয়া চলিয়া গেল । শশী মনে মনে কহিল, স্বামীর এমন কোনো অপরাধ কল্পনা করিতে পারি না, যাহাতে তাহার প্রতি মনের ভাব এত কঠিন হইয়া উঠিতে পারে । এই কথা মনের মধ্যে আলোচনা করিতে করিতেই তাহার কোমল হৃদয়ের সমস্ত প্রীতিরস তাহার প্রবাসী স্বামীর অভিমুখে উচ্ছসিত হইয়া উঠিল ; শয্যাতলে তাহার স্বামী যে অংশে শয়ন করিত সেই অংশের উপর বাহু প্রসারণ করিয়া পড়িয়া শূন্য বালিশকে চুম্বন করিল, বালিশের মধ্যে স্বামীর মাথার আঘাণ অনুভব করিল এবং দ্বার রুদ্ধ করিয়া কাঠের বাক্স হইতে স্বামীর একখানি বহুকালের লুপ্তপ্রায় ফোটােগ্রাফ এবং হাতের লেখা চিঠিগুলি বাহির করিয়া বসিল । সেদিনকার নিস্তব্ধ মধ্যাহ্ন। এইরূপে নিভৃত কক্ষে নির্জন চিন্তায় পুরাতন স্মৃতিতে এবং বিষাদের অশ্রািজলে কাটিয়া গেল । শশিকলা এবং জয়গোপালের যে নবদম্পত্য তাহা নহে । বাল্যকালে বিবাহ হইয়াছিল, ইতিমধ্যে সন্তানাদিও হইয়াছে । উভয়ে বহুকাল একত্রে অবস্থান করিয়া নিতান্ত সহজ। সাধারণ ভাবেই দিন কাটিয়াছে। কোনো পক্ষেই অপরিমিত প্ৰেমোচ্ছাসের কোনো লক্ষণ দেখা যায় নাই। প্ৰায় ষোলো বৎসর একাদিক্ৰমে অবিচ্ছেদে যাপন করিয়া হঠাৎ কর্মবশে তাহার স্বামী বিদেশে চলিয়া যাওয়ার পর