পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

छा°ान्-शाउँ 8 S. G. ইলেকট্রিক লাইট দিয়ে একেবারে হেসে উড়িয়ে দিতে চায় না । কেননা, সে যেটুকু সময় নেয়। আয়ু দিয়ে, অর্থ দিয়ে তার দাম চুকিয়ে দিতে হয় ; সহজে কেউ তার অপব্যয় করতে পারে না । কিন্তু, অনাবশ্যকের তালমানের বোধ নেই ; সে সময়কে উড়িয়ে দেয়, অসময়কে টিকতে দেয় না । সে সদর রাস্তা দিয়ে ঢোকে, খিড়কির রাস্তা দিয়ে ঢোকে, আবার জানােলা দিয়ে ঢুকে পড়ে । সে কাজের সময় দরজায় ঘা মারে, ছুটির সময় হুড়মুড়া করে আসে, রাত্রে ঘুম ভাঙিয়ে দেয় । তার কােজ নেই। ব’লেই তার ব্যস্ততা আরো বেশি । আবশ্যক কাজের পরিমাণ আছে, অনাবশ্যক কাজের পরিমাণ নেই ; এইজন্যে অপরিমেয়ের আসনটি ঐ লক্ষ্মীছাড়াই জুড়ে বসে, ওকে ঠেলে ওঠানো দায় হয় । তখনই মনে হয়, দেশ ছেড়ে পালাই, সন্ন্যাসী হয়ে বেরই, সংসারে আর টেকা যায় না ! যাক, যেমনি বেরিয়ে পড়েছি আমনি বুঝতে পেরেছি, বিরাট বিশ্বের সঙ্গে আমাদের যে আনন্দের সম্বন্ধ সেটাকে দিনরাত অস্বীকার করে কোনো বাহাদুরি নেই। এই যে, ঠেলাঠুলি ঠেসাঠেসি নেই। অথচ সমস্ত কানায় কানায় ভরা, এইখানকার দর্পণটিতে যেন নিজের মুখের ছায়া দেখতে পেলুম । “আমি আছি। এই কথাটা গলির মধ্যে, ঘরবাড়ির মধ্যে ভারি ভেঙে চুরে বিকৃত হয়ে দেখা দেয় । এই কথাটাকে এই সমুদ্রের উপর আকাশের উপর সম্পূর্ণ ছড়িয়ে দিয়ে দেখলে তবে তার মানে বুঝতে পারি ; তখন আবশ্যককে ছাড়িয়ে, অনাবশ্যককে পেরিয়ে আনন্দলোকে তার অভ্যর্থনা দেখতে পাই ; তখন স্পষ্ট করে বুঝি, ঋষি কেন মানুষদের অমৃতস্য পুত্ৰাঃ ব’লে আহবান করেছিলেন । Σ Σ সেই খিদিরপুরের ঘাট থেকে আরম্ভ করে আর এই হংকঙের ঘাট পর্যন্ত, বন্দরে বন্দরে বাণিজ্যের চেহারা দেখে আসছি । সে যে কী প্ৰকাণ্ড, এমন ক’রে তাকে চোখে না দেখলে বোঝা যায় না । শুধু প্ৰকাণ্ড নয়, সে একটা জবািড়জঙ্গ ব্যাপার । কবিকঙ্কণচণ্ডীতে ব্যাধের আহারের যে বর্ণনা আছে- সে এক-এক গ্রাসে এক-এক তাল গিলছে, তার ভোজন উৎকট, তার শব্দ উৎকট, এও সেইরকম ; এই বাণিজ্যব্যান্ধটাও হাসফাস করতে করতে এক-এক পিণ্ড মুখে যা পুরছে, সে দেখে ভয় হয় । তার বিরাম নেই, আর তার শব্দই বা কী । লোহার হাত দিয়ে মুখে তুলছে, লোহার দাঁত দিয়ে চিবচ্ছে, লোহার। পাকযন্ত্রে চিরপ্ৰদীপ্ত জঠরানলে হজম করছে এবং লোহার শিরা উপশিরার ভিতর দিয়ে তার জগৎজোড়া কলেবারের সর্বত্র সোনার রক্তস্রোত চালান করে দিচ্ছে । একে দেখে মনে হয় যে, এ একটা জন্তু, এ যেন পৃথিবীর প্রথম যুগের দানবজন্তুগুলোর মতো । কেবলমাত্র তার লেজের আয়তন দেখলেই শরীর আঁতকে ওঠে । তার পরে, সে জলচর হবে, কি স্থলচর হবে, কি পাখি হবে, এখনো তা স্পষ্ট ঠিক হয় নি ; সে খানিকটা সরীসৃপের মতো, খানিকটা বাদুড়ের মতো, খানিকটা গণ্ডারের মতো । অঙ্গসৌষ্ঠব বলতে যা বোঝায় তা তার কোথাও কিছুমাত্র নেই। তার গায়ের চামড়া ভয়ংকর স্কুল ; তার থাবা যেখানে পড়ে সেখানে পৃথিবীর গায়ের কোমল সবুজ চামড়া উঠে গিয়ে একেবারে তার হাড় বেরিয়ে পড়ে ; চলাবার সময় তার বৃহৎ বিরূপ লেজটা যখন নড়তে থাকে তখন তার গ্রস্থিতে গ্ৰন্থিতে সংঘর্ষ হয়ে এমন অ্যাওয়াজ হতে থাকে যে, দিগঙ্গানারা মুছিত হয়ে পড়ে। তার পরে, কেবলমাত্র তার এই বিপুল দেহটা রক্ষা করবার জন্যে এত রাশি রাশি খাদ্য তার দরকার হয় যে, ধরিত্রী ক্লিষ্ট হয়ে ওঠে । সে যে কেবলমাত্র থাবা থাবা জিনিস খাচ্ছে তা নয়, সে মানুষ খাচ্ছে— স্ত্রী পুরুষ ছেলে কিছুই সে বিচার করে না । কিন্তু, জগতের সেই প্রথম যুগের দানব-জন্তুগুলো টিকল না। তাদের অপরিমিত বিপুলতাই পদে পদে তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষি দেওয়াতে, বিধাতার আদালতে তাদের প্রাণদণ্ডের বিধান হল । সৌষ্ঠব জিনিসটা কেবলমাত্র সৌন্দর্যের প্রমাণ দেয় না, উপযোগিতারও প্রমাণ দেয় । ইহাসফাসটা যখন অত্যন্ত বেশি চোখে পড়ে, আয়তনটার মধ্যে যখন কেবলমাত্ৰ শক্তি দেখি, শ্ৰী দেখি নে, তখন বেশ বুঝতে