পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

GS8 রবীন্দ্র-রচনাবলী রাজা পড়ে যেতে লাগলেন ; উচ্চারণের বিকৃতি থেকে বহু কষ্টে তাদের উদ্ধার করবার চেষ্টা করা গেল। সমস্তটা যোগতত্ত্বের উপদেশ। চিত্তবুদ্ধি, ত্রি-অক্ষরাত্মক ওঁ, চন্দ্ৰবিন্দু এবং অন্য সমস্ত শব্দ ও ভাবনা বর্জন করে শুদ্ধ চৈতন্যযোগে সুখমাপুয়াৎ- এই হচ্ছে সাধনা । আমি রাজাকে আশ্বাস দিলেম যে, আমরা এখানে যে সংস্কৃতজ্ঞ পণ্ডিত পাঠিয়ে দেব, তিনি এখানকার গ্রন্থগুলি থেকে বিকৃত ও বিস্মৃত পাঠ উদ্ধার করে তার অর্থব্যাখ্যা করে দিতে পারবেন। এদিকে আমার শরীর অত্যন্ত ক্লান্ত হতে চলল। প্ৰতি মুহুর্তে বুঝতে পারলুম, আমার শক্তিতে কুলোবে না । সৌভাগ্যক্রমে সুনীতি আমাদের সঙ্গে আছেন ; তার অশ্রান্ত উদ্যম, অদম্য উৎসাহ । তিনি ধুতি পারে, কোমরে। পট্টবস্ত্ৰ জড়িয়ে, ‘পেদণ্ড’ অর্থাৎ এখানকার ব্ৰাহ্মণদের সঙ্গে বসে গেলেন । র্তার সঙ্গে আমাদের দেশের পুজোপকরণ ছিল ; পূজাপদ্ধতি তাদের দেখিয়ে দিলেন । আলাপ-আলোচনায় সকলকেই তিনি আগ্ৰহান্বিত করে তুলেছেন । যখন দেখা গেল, আমার শরীর আর সইতে পারছে না, তখন আমি রাজপুরী থেকে পালিয়ে এই আম্পূল-তীৰ্থাশ্রমেষু নির্বাসন গ্ৰহণ করলুম। এখানে লোকের ভিড় নেই, অভ্যর্থনা-পরিচর্যার উপদ্ৰব নেই। চার দিকে সুন্দর গিরিব্রজ, শস্যশ্যামলা উপত্যকা, জনপদবধূদের স্নানসেবায় চঞ্চল উৎসজলসিঞ্চায়ের অবিরত কলপ্রবাহ, শৈলীতটে নির্মল নীলাকাশে নারিকেলশাখার নিত্য আন্দোলন ; আমি বসে আছি বারান্দায়, কখনো লিখছি, কখনো সামনে চেয়ে দেখছি । এমন সময়ে হঠাৎ এসে থামাল এক মোটরগাড়ি । গিয়ানিয়ারের রাজা ও এই প্রদেশের একজন ওলন্দাজ রাজপুরুষ নেমে এলেন । এর বাড়িতে আমার নিমন্ত্রণ । অন্তত এক রাত্রি যাপন করতে হবে । প্রসঙ্গক্রমে আপনিই মহাভারতের কথা উঠল । মহাভারতের যে-কয়টা পর্ব এখনো এখানে পাওয়া যায়। তাই তিনি অনেক ভেবে ভেবে আউড়িয়ে গেলেন । বাকি পর্ব কী তাই তিনি জানতে চান। এখানে কেবল আছে, আদিপর্ব, বিরাটপর্ব, উদ্যোগপর্ব, ভীষ্মপর্ব, আশ্রমবাসপর্ব, মুষলপর্ব, প্ৰস্থানিকপর্ব, স্বৰ্গারোহণ পর্ব। মহাভারতের কাহিনীগুলির উপরে এ দেশের লোকের চিত্ত বাসা বেঁধে আছে । তাদের আমোদে আহলাদে কাব্যে গানে অভিনয়ে জীবনযাত্রায় মহাভারতের সমস্ত চরিত্রগুলি বিচিত্ৰভাবে বর্তমান । অর্জন এদের আদর্শ পুরুষ । এখানে মহাভারতের গল্পগুলি কিরকম বদলে গেছে তার একটা দৃষ্টান্ত দিই। সংস্কৃত মহাভারতের শিখণ্ডী এখানে শ্ৰীকান্তি নাম ধরেছে । শ্ৰীকান্তি অর্জনের স্ত্রী । তিনি যুদ্ধের রথে অর্জনের সামনে থেকে ভীষ্মবধে সহায়তা করেছিলেন । এই শ্ৰীকান্তি এখানে সতী স্ত্রীর আদর্শ । গিয়ানিয়ারের রাজা আমাকে অনুরোধ করে গেলেন, আজ রাত্রে মহাভারতের হারানো পর্ব প্রভৃতি পৌরাণিক বিষয় নিয়ে তিনি আমার সঙ্গে আলোচনা করতে চান। আমি তাকে সুনীতির কথা বলেছি ; সুনীতি তাকে শাস্ত্ৰ বিষয়ে যথাভজ্ঞান সংবাদ দিতে পারবেন। ভারতের ভূগোলস্মৃতি সম্বন্ধে একটা কথা আমার মনে আন্দোলিত হচ্ছে। নদীর নামমালার মধ্যে সিন্ধু ও শতদ্রু প্রভৃতি পঞ্চনদের নাম নেই, ব্ৰহ্মপুত্রের নামও বাদ পড়েছে। অথচ, দক্ষিণের প্রধান নদীগুলির নাম দেখছি। এর থেকে বোঝা যায়, সেই যুগে পাঞ্জাবপ্রদেশ শাক তুন যবন পারসিকদের দ্বারা বারবার বিধ্বস্ত ও অধিকৃত হয়ে ভারতবর্ষ থেকে যেন বিদ্যায় সভ্যতায় স্বলিত হয়ে পড়েছিল ; অপর পক্ষে ব্ৰহ্মপুত্র নদের দ্বারা অভিষিক্ত ভারতের পূর্বতম দেশ তখনো যথার্থীরাপে হিন্দুভারতের অঙ্গীভূত হয় নি । এই তো গেল এখানকার বিবরণ । আমার নিজের অবস্থাটা যেরকম দেখছি তাতে এখানে আমার ভ্ৰমণ সংক্ষেপ করতে হবে । কারেম আসন । বালি es ventos y a Sao ১ মীরা দেবীকে লিখিত ।