পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৯০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মালঞ্চ ১৬৯ “মালী তার জমি তৈরি করছে।” “জমি ! সে তো আমি আগেই তৈরি করে রেখেছি। হল। মালীর উপর ভার দিয়েছ, তা হলেই দণতন-কাঠির চাষ হবে আর কী ।” কথাটাতে তাড়াতাড়ি বাধা দিয়ে নীরজা বললে, “সরলা, যাও তো কমলালেবুর রস করে নিয়ে এসে গে, তাতে একটু আদার রস দিয়ে, আর মধু so সরলা মাথা হেঁট করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল । নীরজা জিজ্ঞাসা করলে, “আজ তুমি ভোরে উঠেছিলে যেমন আমরা রোজ উঠতুম ?” “ই উঠেছিলুম।” “ঘড়িতে তেমনি এলারমের দম দেওয়া ছিল ?” “ছিল বই-কি।” “সেই নিমগাছতলায় সেই কাটা গাছের গুড়ি । তার উপরে চায়ের সরঞ্জাম । সব ঠিক রেখেছিল বাস্থ ?” “রেখেছিল। নইলে খেসারতের দাবিতে নালিশ রুজু করতুম তোমার আদালতে ।” “দুটো চৌকিই পাতা ছিল ?” “পাতা ছিল সেই আগেকার মতোই। আর ছিল সেই নীল-পাড়-দেওয়া বাসস্তী রংএর চায়ের সরঞ্জাম ; দুধের জ্যগ রুপোর, ছোটো সাদা পাথরের বাটিতে চিনি, আর ড্রাগন-আঁকা জাপানী ট্রে।” “অন্য চৌকিট খালি রাখলে কেন।” “ইচ্ছে করে রাখি নি । আকাশে তারাগুলো গোনাগুনতি ঠিকই ছিল, কেবল শুক্লপঞ্চমীর চাদ রইল দিগস্তের বাইরে । সুযোগ থাকলে তাকে আনতেম ধরে ।” “সরলাকে কেন ডাক না তোমার চায়ের টেবিলে ।” এর উত্তরে বললেই হত, তোমার আসনে আর কাউকে ডাকতে মন যায় না। সত্যবাদী তা না বলে বললে, “সকালবেলায় বোধ হয় সে জপতপ কিছু করে, আমার মতো ভজনপূজনহীন ম্লেচ্ছ তো নয়।” “চ খাওয়ার পরে আজ বুঝি অরকিড-ঘরে তাকে নিয়ে গিয়েছিলে ?” “হা, কিছু কাজ ছিল, ওকে বুঝিয়ে দিয়েই ছুটতে হল দোকানে।” । “আচ্ছ, একটা কথা জিজ্ঞাসা করি, সরলার সঙ্গে রমেনের বিয়ে দাও না কেন।” “ঘটকালি কি আমার ব্যাবসা ।”