পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২০৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মালঞ্চ Sbra “আয়া, তুমি ওঁকে নিয়ে যাও, ভয় নেই, ভালোই হবে।” আয়াকে অবলম্বন করে নীরজা যখন চলে গেল এমন সময়ে আদিত্য ঘরে এল । আদিত্য জিজ্ঞাসা করলে, “এ কী, নীরু ঘরে নেই কেন।” “এখনই আসবেন, তিনি ঠাকুরঘরে গেছেন।” “ঠাকুরঘরে । ঘর তো কাছে নয়। ডাক্তারের নিষেধ আছে যে ।” “শুনো না দাদা। ডাক্তারের ওষুধের চেয়ে কাজে লাগবে। একবার কেবল ফুলের অঞ্জলি দিয়ে প্রণাম করেই চলে আসবেন। 象 নীরজাকে চিঠি লিখে যখন পাঠিয়ে দিয়েছিল তখন আদিত্য স্পষ্ট জানত না যে, অদৃষ্ট তার জীবনের পটে প্রথম যে-লিপিখানি অদৃশ্ব কালিতে লিখে রেখেছে, বাইরের তাপ লেগে সেটা হঠাৎ এতখানি উঠবে উজ্জল হয়ে । প্রথমে ও সরলাকে বলতে এসেছিল— অণর উপায় নেই, ছাড়াছাড়ি করতে হবে । সেই কথা বলবার বেলাতেই ওর মুখ দিয়ে বেরল উলটো কথা। তার পরে জ্যোৎস্নারাত্রে ঘাটে বসে বসে বারবার করে বলেছে— জীবনের সত্যকে আবিষ্কার করেছে বিলম্বে, তাই বলেই তাকে অস্বীকার করতে পারে না। ওর তো অপরাধ নেই, লজ্জা করবার নেই কিছু। অন্যায় তবেই হবে, যদি সত্যকে গোপন করতে যায়। করবে না গোপন, নিশ্চয় স্থির ; ফলাফল যা হয় তা হোক। এ কথা আদিত্য বেশ বুঝেছে যে, যদি তার জীবনের কেন্দ্র থেকে কর্মের ক্ষেত্র থেকে সরলাকে আজ সরিয়ে দেয়, তবে সেই একাকিতায়, সেই নীরসতায় ওর সমস্ত নষ্ট হয়ে যাবে, ওর কাজ পর্যন্ত যাবে বন্ধ হয়ে । “রমেন, তুমি আমাদের সব কথা জান আমি জানি।” “ই জানি।” “আজ চুকিয়ে দেব সব, আজ পরদা ফেলব উঠিয়ে।” “তুমি তো একলা নও দাদা। বোঝা ঘাড় থেকে ঝেড়ে ফেললেই তো হল না। বউদি রয়েছেন ওদিকে । সংসারের গ্রস্থি জটিল ।” “তোমার বউদি আর আমার মধ্যে মিথ্যাকে খাড়া করে রাখতে পারব না । বাল্যকাল থেকে সরলার সঙ্গে আমার যে সম্বন্ধ তার মধ্যে কোনো অপরাধ নেই সে কথা মান তো ?” “মানি বই-কি।” “সেই সহজ সম্বন্ধের তলায় গভীর ভালোবাসা ঢাকা ছিল, জানতে পারি নি, সে কি আমাদের দোষ ।” ”