পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শিক্ষা *- |రిన సె বাহিরে ‘ন শোভস্তে ; র্তাহারা বইপড়ার মধ্যে মানুষ, তাই মানুষের মধ্যে র্তাহাদের কোনো সোয়াস্তি নাই । এরূপ অবস্থার স্বাভাবিক পরিণাম নিরানন্দ । একটা সৃষ্টিছাড়া মানসিক ব্যাধি যুরোপের সাহিত্যে সমাজে সর্বত্র প্রকাশ পাইতেছে, তাহাকে সে-দেশের লোকে বলে world-weariness । লোকের স্বায়ু বিকল হইয়া গেছে ; জীবনের স্বাদ চলিয়া গেছে ; নব নব উত্তেজনা স্থষ্টি করিয়া নিজেকে ভুলাইবার চেষ্টা চলিতেছে। এই অস্থখ, এই বিকলতা যে কিসের জন্য, কিছুই বুঝিবার জো নাই। এই অবসাদ মেয়েপুরুষ উভয়কেই পাইয়া বসিয়াছে। স্বভাব হইতে ক্রমশই অনেক দূরে চলিয়া যাওয়া ইহার কারণ। কৃত্রিম স্ববিধ উত্তরোত্তর আকাশপ্রমাণ হইয়৷ জগতের জীবকে জগৎ ছাড়া করিয়া দিয়াছে। পুথির মধ্যে মন, আসবাবের মধ্যে শরীর প্রচ্ছন্ন হইয়া আত্মার সমস্ত দরজা-জানলাগুলাকে অবরুদ্ধ করয়াছে। যাহা সহজ, যাহ। নিত্য, যাহা মূল্যহীন বলিয়াই সর্বাপেক্ষ মূল্যবান, তাহার সঙ্গে আনাগোনা বন্ধ হওয়াতে তাহা গ্রহণ করিবার ক্ষমতা চলিয়া গেছে। যে-সকল জিনিস উত্তেজনার নব নব তাড়নায় উদ্ভাবিত হইয়া দুইচারিদিন ফ্যাশনের আবর্তে আবিল হইয়া উঠে এবং তাহার পরেই অনাদরে আবর্জনার মধ্যে জমা হইয়া সমাজের বাতাসকে দূষিত করে, তাহাই কেবল পুনঃপুনঃ লক্ষ লক্ষ গুণী ও মজুরের চেষ্টাকে সমস্ত সমাজ জুড়িয়া ঘানির বলদের মতো ঘুরাইয়া মারিতেছে। এক বই হইতে আর-এক বই উৎপন্ন হইতেছে, এক কাব্যগ্রন্থ হইতে আর-এক কাব্যগ্রন্থের জন্ম, একজনের মত মুখে-মুখে সহস্ৰলোকের মত হইয়া দাড়াইতেছে ; অনুকরণ হইতে অনুকরণের প্রবাহ চলিয়াছে ; এমনি করিয়া পুথি ও কথার অরণ্য মানুষের চারদিকে নিবিড় হইয়া উঠিতেছে, প্রাকৃতিক জগতের সঙ্গে ইহার সম্বন্ধ ক্রমশই দূরে চলিয়া যাইতেছে। মানুষের অনেকগুলি মনের ভাব উৎপন্ন হইতেছে যাহা কেবল পুথির স্বষ্টি । এই-সকল বাস্তবতাবর্জিত ভাবগুলা ভূতের মতো মানুষকে পাইয়৷ বসে ; তাহার মনের স্বাস্থ্য নষ্ট করে ; তাহাকে অত্যুক্তি এবং আতিশয্যের দিকে লইয়া যায় ; সকলে মিলিয়া ক্রমাগতই একই ধুয়া ধরিয়া কৃত্রিম উৎসাহের দ্বারা সত্যের পরিমাণ নষ্ট করিয়া তাহাকে মিথ্যা করিয়া তোলে। দৃষ্টান্তস্বরূপে বলিতে পারি, প্যাট্রিয়টিজম-নামক পদার্থ। ইহার মধ্যে যেটুকু সত্য ছিল, প্রতিদিন সকলে পড়িয়া সেটাকে তুলা ধুনিয়া একটা প্রকাও মিথ্যা করিয়া তুলিয়াছে ; এখন এই তৈরি বুলিটাকে প্রাণপণ চেষ্টায় সত্য করিয়া তুলিবার জন্য কত কৃত্রিম উপায়, কত অলীক উদ্দীপনা, কত