পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শব্দতত্ত্ব V>)(? & উচ্চারণবৈচিত্র্য সম্বন্ধে আমরা সাধনা পত্রিকায় আলোচনা করিয়াছি। বীম সাহেব লিখিয়াছেন, যাওয়া-সম্বন্ধীয় ক্রিয়াপদ গেল শব্দের উচ্চারণ গ্যাল হইয়াছে, গিলিবার সম্বন্ধীয় ক্রিয়াপদ গেল শব্দের উচ্চারণে বিশুদ্ধ একার রক্ষিত হইয়াছে । তিনি বলেন, অভ্যাস ব্যতীত ইহার নির্ণয়ের অন্য উপায় নাই। কিন্তু এই ক্রিয়াপদগুলি সম্বন্ধে একটি সহজ নিয়ম আছে । যে-সকল ক্রিয়াপদের আরম্ভ-শব্দে ইকার অাছে, যথা, গিল মিল ইত্যাদি, তাহার। ইকারের পরিবর্তে একার গ্রহণ করিলে একারের উচ্চারণ বিশুদ্ধ থাকে ; যথা, গিলন হইতে গেল, মিলন হইতে মেলা ( মেলন শব্দ হইতে যে মেলা-র উৎপত্তি তাহার উচ্চারণ ম্যাল ), লিখন হইতে লেখা, শিক্ষণ হইতে শেখ ইত্যাদি । অন্য সর্বত্রই একারের উচ্চারণ অ্যা হইয়া যায় ; যথা, খেলন— খেলা, ঠেলন— ঠেলা, দেখন— দেখা ইত্যাদি। অর্থাৎ গোড়ায় যেখানে ই থাকে সেটা হয় এ, গোড়ায় যেখানে এ থাকে সেটা হয় অ্যা। গোড়ায় কোথায় এ অাছে এবং কোথায় ই আছে, তাহা ইতে প্রত্যয়ের দ্বারা ধরা পড়ে ; যথা, গিলিতে মিলিতে লিখিতে শিখিতে মিটিতে পিটিতে ; অন্যত্র, খেলিতে ঠেলিতে দেখিতে ঠেকিতে বেঁকিতে মেলিতে হেলিতে ইত্যাদি । বীম লিখিয়াছেন, ও এবং য় পরে পরে অসিলে তাহার উচ্চারণ প্রায় ইংরেজি w-র মতো হয় ; যথা, ওয়াশিল তলওয়ার ওয়ার্ড রেলওয়ে ইত্যাদি। একটা জায়গায় ইহার ব্যতিক্রম আছে, তাহ লক্ষ না করিয়া সাহেব একটি অদ্ভুত বানান করিয়াছেন ; তিনি ইংরেজি will শব্দকে উয়িল অথবা উইল না লিথিয়া ওয়িল লিখিয়াছেন। ওয় সর্বত্রই ইংরেজি w-র পরিবর্তে ব্যবহৃত হইতে পারে, কেবল এই ‘ও’ ইকারের পূর্বে উ না হইয়া যায় না। ব-এর সহিত যফলা যোগে দুই তিন রকম উচ্চারণ হয় তাহা বীমস্ সাহেব ধরিয়াছেন, কিন্তু দৃষ্টাস্তে অদ্ভুত ভুল করিয়াছেন। তিনি লিথিয়াছেন ব্যবহার-এর উচ্চারণ বেভার, ব্যক্তি-র উচ্চারণ বিক্তি, এবং ব্যতীত শব্দের উচ্চারণ বিতীত । তাহা ছাড়া, কেবল ব-এর সঙ্গে যফলা যোগেই যে উচ্চারণবৈচিত্র্য ঘটে তাহা নহে, সকল বর্ণ সম্বন্ধেই এইরূপ। ব্যবহার শব্দের ব্য এবং ত্যক্ত শব্দের ত্য উভয়েই যফলার স্থলে যফলা-আকার উচ্চারণ হয়। ইকারের পূর্বে যফলার উচ্চারণ এ হইয়া যায়, ব্যক্তি এবং ব্যতীত তাহার দৃষ্টাস্ত । নব্য ভব্য প্রভৃতি মধ্য বা শেষাক্ষরবর্তী যফলা আশ্রয়বর্ণকে দ্বিগুণিত করে মাত্র। ইকারের পূর্বে যফলা যেমন একার হইয়া যায়, তেমনই ক্ষ-ও একার গ্রহণ করে ; যেমন ক্ষতি শবদকে কথিত ভাষায় খেতি উচ্চারণ করে। ইহার প্রধান কারণ, ক্ষ অক্ষরের উচ্চারণে আমরা সাধারণত যফলা যোগ করিয়া লই । এইজন্য ক্ষমা শব্দের ইতর উচ্চারণ খ্যাম । > ૨||૨ 8