পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শবদতত্ত্ব פףס অদ্ভুত বিশেষত্ববশত আমরা তাহাকে কনকন ধ্বনির সহিত তুলনা করি ; অর্থাৎ আমরা মনে করি, সেই বেদন৷ যদি শ্রুতিগম্য হইত তবে তাহা কনকন শব্দরূপে প্রকাশ পাইত । আমরা শরীরের প্রায় সর্বপ্রকার বেদনাকেই বিশেষ বিশেষ ধ্বনির ভাষায় ব্যক্ত করি ; যথা, কটকট কনকন করকর ( চোখের বালি ) কুটকুট গা ঘ্যানঘ্যান ( বা গা-ঘিনঘিন ) গা-চচ্চড় চিনচিন গা-ছমছম ঝিনঝিন দবদব ধকধক বুক-দুন্দ ডু ম্যাজম্যাজ সুড়স্থড় সড়সড় রীরী । ইংরেজিতে এইরূপ শারীরিক বেদনাসকলকে— throbbing gnawing boring crawling cutting tearing bursting of বিশেষণে অভিহিত করা হয়। আমরাও ছিড়ে পড়া, ফেটে যাওয়া, কামড়ানো প্রভৃতি বিশেষণ আবশ্বকমতে ব্যবহার করি, কিন্তু উল্লিখিত ধ্বন্যাত্মক শব্দে তাহ যে ভাবে ব্যক্ত হয়, তাহ আর কিছুতে হইবার জো নাই। ওই-সকল ধ্বনির সহিত ওইসকল বেদনার সম্বন্ধ যে কাল্পনিক, এক্ষণে আমাদের পক্ষে তাহা মনে করাই কঠিন । বাস্তবিক অনুভূতি সম্বন্ধে কিরূপ বিসদৃশ উপমা আমাদের মনে উদিত হয়, গা মাটি মাটি করা, বাক্যটি তাহার উদাহরণস্থল। মাটির সহিত শারীরিক অবস্থাবিশেষের যে কী তুলনা হইতে পারে তাহা বুঝা যায় না, অথচ, গা মাটিমাটি করা, কথাটা আমাদের কাছে সুস্পষ্ট ভাববহ । সর্বপ্রকার শূন্ততা, স্তব্ধতা, এমন-কি নিঃশব্দতাকেও আমরা ধ্বনির দ্বারা ব্যক্ত করি। আমাদের ভাষায় শূন্য ঘর খ খ করে, মধ্যাহ্ন রৌদ্রের স্তব্ধতা ঝ ঝণ করে, শূন্ত মাঠ ধৃ ধূ করে, বৃহৎ জলাশয় থৈ থৈ করে, পোড়োবাড়ি ই৷ ই করে, শূন্য হৃদয় হু হু করে, কোথাও কেহ না থাকিলে ভো ভো করিতে থাকে— এই-সকল নিঃশব্দতার ধ্বনি অন্যভাষীদের নিকট কিরূপ জানি না, আমাদের কাছে নিরতিশয় স্পষ্ট ভাববহ ; ইংরেজি ভাষার desolate প্রভৃতি অর্থাত্মক শব্দ, অন্তত আমাদের নিকট এত সুস্পষ্ট নহে । বর্ণকে ধ্বনিরূপে বর্ণনা করা, সেও আশ্চর্য। টকটকে টুকটুকে ডগডগে দগদগে রগরগে লাল ; ফুটফুটে ফ্যাটফেটে ফ্যাকফেকে ধবধবে শাদা ; মিসমিসে কুচকুচে কালো । টকটক শব্দ কাঠের ন্যায় কঠিন পদার্থের শব্দ । যে-লাল অত্যন্ত কড়া লাল সে যখন চক্ষুতে আঘাত করে, তখন সেই আঘাতক্রিয়ার সহিত টকটক শব্দ আমাদের মনে উহ থাকিয়া যায়। কবির কর্ণে যেমন ‘silent spheres’ অর্থাৎ নি:শব্দ জ্যোতিষ্কলোকের একটি সংগীত উহ্যভাবে ধ্বনিত হইতে থাকে, এও সেইরূপ । ঘোর