পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সমাজ 않이 সহকারে কলের কাজ করিতে পারে না। কারণ, যাহার কর্তৃত্ব অনুভব করিয়া সুখ পায় তাহারাই কর্মের অনুরাগী। উদেশ্বসাধনের উপলক্ষে বাধা অতিক্রম করিয়া একটা কার্য সমাধাপূর্বক তাহারা আপনারই স্বাধীনতা উপলব্ধি করে, সে-ই তাহাদের আনন্দ । কিন্তু সেরূপ কর্মানুরাগী লোক কলের কাজ করিয়া স্বর্থী হয় না, কারণ কলের কাজে কেবল কাজের দুঃখ আছে অথচ কাজের মুখটুকু নাই। তাহাতে স্বাধীনতা নাই। কোনো কর্মপ্রিয় লোক ঘানির গোরু কিংবা স্যাক্রাগাড়ির ঘোড়া হইতে চাহে না । কিন্তু যাহার কর্মে অনুরাগ দূর হইয়া গেছে তাহাকে এরূপ কাজে লাগাইলে ললাটের লিখন স্মরণ করিয়া বিনা উপদ্রবে সে কাজ করিয়া যায়। মাঝে ইংরেজি শিক্ষায় আমাদের মনে ঈষৎ চাঞ্চল্য আনয়ন করিয়াছিল । বহুদিবসের পিঞ্জরবদ্ধ বিহঙ্গের মনে মুক্ত আকাশ এবং স্বাধীন নীড়ের কথা উদয় হইয়াছিল। কিন্তু আমাদের জ্ঞানী লোকেরা সম্প্রতি বলিতে আরম্ভ করিয়াছেন, এরূপ চাঞ্চল্য পবিত্র হিন্দুদিগকে শোভা পায় না। তাহারা উপদেশ দেন, অদৃষ্টবাদ অতি পবিত্র, কারণ তাহাতে স্বাধীন চেষ্টাকে যথাসম্ভব দূর করিয়া দেয় । সর্ববিষয়ে শাস্ত্রান্থশাসন অতি পবিত্র, কারণ তাহাতে স্বাধীন বুদ্ধিকে অকৰ্মণ্য করিয়া রাখে। আমাদের যাহা আছে তাহাই সর্বাপেক্ষা পবিত্র, কারণ এ কথা স্মরণ রাখিলে স্বাধীন বুদ্ধি এবং স্বাধীন চেষ্টাকে একেবারেই জবাব দেওয়া যাইতে পারে। বোধ হয় এই-সকল জ্ঞানগর্ত কথা সাধারণের খুব হৃদয়গ্রাহী হইবে, বহুকাল হইতে হৃদয় এইভাবেই প্রস্তুত হইয়া আছে। যন্ত্রবিজ্ঞানের উন্নতি-সহকারে যন্ত্র যতই সম্পূর্ণ হইবে তাহা চালনা করিতে মানুষের বুদ্ধির আবশ্বক ততই হ্রাস হইয়া আসিবে, এবং স্বাধীনবুদ্ধিসম্পন্ন জীবের পক্ষে সে কাজ ততই অসহ্য হইয়া উঠিবে। আশা আছে, ভারতবর্ষীয়দের বিশেষ উপযোগিতা তখনই যুরোপ বুঝিতে পারিবে । যাহারা মান্ধাতার আমলের লাঙ্গলে চাষ করিতেছে, যাহার মনুর আমলের ঘানিতে তেল বাহির করিতেছে, যাহারা যেখানে পড়ে সেইখানে পড়িয়া থাকাকেই পৃথিবীর মধ্যে সর্বোচ্চ গৌরবের বিষয় বলিয়া গর্ব করে, আবশ্বক হইলে তাহারাই সহিষ্ণুভাবে নতশিরে সমস্ত যুরোপের কল টানিতে পারিবে। যদি বরাবর পবিত্র আর্যশিক্ষাই জয়ী হয় তবে আমাদের প্রপৌত্রদিগের চাকরির জন্ত বোধ হয় আমাদের পৌত্রদিগকে অধিক ভাবিতে হইবে না। 〉 &ぬ切ー