পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

‘শিক্ষার হেরফের’ নামক প্রবন্ধ যখন লিখিত হয় তখন মনে করি নাই যে, বর্তমান শিক্ষাপ্রণালী অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রটি প্রদর্শনে কাহারও হৃদয়ে আঘাত লাগিবে । বিশেষত উক্ত প্রবন্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সম্মুখেই পঠিত হয় । সেখানে রাজসাহী কলেজের অধ্যক্ষ ও অধ্যাপক অনেকেই উপস্থিত ছিলেন । র্তাহারা কেহ কোনোরূপ ক্ষোভ প্রকাশ করেন নাই ; বরং যতদূর জানা গিয়াছিল অনেকেই অমুকুলভাবে লেখকের মতের অনুমোদন করিয়াছিলেন । অবশেষে উক্ত প্রবন্ধ সাধনায় প্রকাশিত হইলে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাধিধারী পাঠক উহ। ইংরেজিতে অনুবাদ করিবার জন্ত ঔৎসুক্য প্রকাশ করেন এবং কলেজের অনেক পুরাতন ছাত্রের নিকট উহার ঐকমত শুনা যায়। বঙ্কিমবাবু, গুরুদাসবাৰু এবং আনন্দমোহন বস্ব মহাশয় তৎসম্বন্ধে ষে-পত্র লিখিয়াছিলেন তাহাও পাঠকগণ অবগত আছেন । ১ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মৃতি র্যাহাদের হৃদয়নিকুঞ্জে প্রিয়স্থান অধিকার করিয়াছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বহিৰ্ভুক্ত লোকের মুখে তাহার কোনোরূপ অমর্যাদার কথা শুনিলে র্তাহাদের মধ্যে কাহারও মনক্ষোভ উপস্থিত হইতে পারে সন্দেহ নাই, অতএব বর্তমান আলোচনায় প্রবৃত্ত হওয়া আমি আমার পক্ষে দুর্ভাগ্য বিবেচনা করি । কেবল, বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাহারা গৌরবস্থল এমন অনেক মহোদয়ের উৎসাহবাক্যে আমি নিজের লজ্জা নিবারণে সক্ষম হইতেছি । to তর্কের আরম্ভেই যখন মূল কথা ছাড়িয়া আনুষঙ্গিক কথা লইয়া আন্দোলন উপস্থিত হয় এবং প্রতিপক্ষকে সমগ্রভাবে বুঝিবার চেষ্টা না করিয়া তাহার কথাগুলিকে খণ্ড খণ্ড ভাবে আক্রমণ করিবার আয়োজন হয়, তখন সেই নিস্ফল বাকযুদ্ধে ভঙ্গ দিয়া পলায়ন করাই স্ববুদ্ধিসংগত। সি দুরে মেঘ খুব রক্তবর্ণ হইয়া উঠে কিন্তু বারিবর্ষণ করে না, এরূপ তর্কও সেইমতে রুদ্রমূর্তি ধারণ করে কিন্তু শীতল শাস্তিবারি বর্ষণ না করিয়াই বায়ুবেগে উড়িয়া যায়। ভাষা একে অসম্পূর্ণ, তাহাতে তাহাকে স্বস্থানচ্যুত করিয়া স্বতন্ত্রভাবে দেখিলে তাহার প্রকৃত অর্থ উদ্ধার করা দুঃসাধ্য হইয়া উঠে। পাঠকসাধারণেরও পূর্বাপর মিলাইয়া দেখিবার অবসর নাই, সেই কারণে প্রতিবাদমাত্রেই তাহাদের চিত্ত বিক্ষিপ্ত ১ দ্রষ্টব্য— গ্রন্থপরিচয়, রবীন্দ্র-রচনাবলীর বর্তমান থওঁ । S ૨{૭૭