পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাহিত্যের পথে 8ම්ම বেলেস্তারাটাকে । আসলে, মানুষের গলদটা এইখানে যে, পনেরো-আনা লোক ঠিক নিজেকে প্রকাশ করিতে পায় না। অথচ নিজের পূর্ণ প্রকাশেই আনন্দ । গুণী যেখানে গুণী সেখানে তার কাজ যতই কঠিন হােক, সেখানেই তার আনন্দ ; মা যেখানে মা সেখানে তার ঝঞ্ঝাট যত বেশিই হোক-না, সেখানেই তার আনন্দ । কেননা, পূর্বেই বলিয়াছি, যথার্থ আনন্দই সমস্ত দুঃখকে শিবের বিষপানের মতো অনায়াসে আত্মসাৎ করিতে পারে । তাই কার্লাইল প্ৰতিভাকে উলটা দিক দিয়া দেখিয়া বলিয়াছেন, অসীম দুঃখ স্বীকার করিবার শক্তিকেই বলে প্ৰতিভা । কিন্তু, মানুষ যে কাজ করে তার অধিকাংশই নিজেকে প্রকাশের জন্য নয় । সে হয় নিজের মনিবকে নয় কোনো প্ৰবল পক্ষকে, নয় কোনো বাধা দস্তুরের কর্মপ্ৰণালীকে পেটের দায়ে বা পিঠের দায়ে প্ৰকাশ করে। পনেরো-আনা মানুষের কাজ অন্যের কাজ । জোর করিয়া মানুষ নিজেকে আর-কেহ কিংবা আর-কিছুর মতো করিতে বাধ্য। চীনের মেয়ের জুতা তার পায়ের মতো নহে, তার পা তার জুতার মতো। কাজেই পাকে দুঃখ পাইতে হয় এবং কুৎসিত হইতে হয় । কিন্তু, এমনতরো কুৎসিত হইবার মন্ত সুবিধা এই যে, সকলেরই সমান কুৎসিত হওয়া সহজ । বিধাতা সকলকে সমান করেন নাই ; কিন্তু নীতিতত্ত্ববিৎ যদি সকলকেই সমান করিতে চায়। তবে তো লড়াই ছাড়া, কৃচ্ছসাধন ছাড়া, কুৎসিত হওয়া ছাড়া আর কথা নাই । গোলমালে দায়ে পড়িয়া এইরকমটা ঘটিয়াছে। এইজন্যই লীলা কথাটাকে আমরা চাপা দিতে চাই । আমরা বুক ফুলাইয়া বলি, জিন-লাগাম পরিয়া ছুটিতে ছুটিতে রাস্তায় মুখ থুবড়াইয়া মরাই মানুষের পরম গৌরব । এ-সমস্ত দাসের জাতির দাসত্বের বড়াই। এমনি করিয়া দাসত্বের মন্ত্র আমাদের কানে আওড়ানো হয়। পাছে এক মুহুর্তের জন্য আমাদের আত্মা আত্মগৌরবে সচেতন হইয়া উঠে । না, আমরা স্যাকরা গাড়ির ঘোড়ার মতো লাগাম-বাধা মরিবার জন্য জন্মাই নাই। আমরা রাজার মতো বাচিব, রাজার মতো মরিব । আমাদের সব চেয়ে বড়ো প্রার্থনা এই যে, আবিরাবীর্ম এধি। হে আবি, তুমি আমার মধ্যে প্রকাশিত হও । তুমি পরিপূর্ণ, তুমি আনন্দ । তোমার রূপই আনন্দরাপ। সেই আনন্দরাপ গাছের চ্যােলা কাঠ নহে, তাহা গাছ । তার মধ্যে হওয়া এবং করা একই । 婚 আমার কথার জবাবে এ কথা বলা চলে যে, আনন্দরাপ মানুষের মধ্যে একবার ভাঙচুরের মধ্যে দিয়া তবে আবার আপনার অখণ্ড পরিপূর্ণতা লাভ করিতে পরিবে। যতদিন তা না হয় ততদিন লড়াইয়ের মন্ত্র দিনরাত জপিতে হইবে ; ততদিন লাগাম পরিয়া মুখ থুবড়িয়া মরিতে হইবে । ততদিন ইস্কুলে আপিসে আদালতে হাটে বাজারে কেবলই নরমেধ যজ্ঞ চলিতে থাকিবে । সেই বলির পশুদের কানে বলিদানের ঢাক-ঢোেলই খুব উচ্চৈঃস্বরে বাজাইয়া তাহদের বুদ্ধিকে ঘুলাইয়া দেওয়া ভালোলািগল, এই হাড়কাই পরম দেবতা, এই খকাখাতই আশীৰ্বল, আর জল্লাগই আমাদের J তা হােক, বলিদানের ঢাক-ঢোল বাজুক আপিসে, বাজুক আদালতে, বাজুক বন্দীদের শিকলের ঝংকারের সঙ্গে তাল রাখিয়া। মরুক সকলে গলদঘর্ম হইয়া, শুষ্কতালু লইয়া, লাগাম কামড়াইয়া রাস্তার ধুলার উপরে। কিন্তু, কবির বীণায় বরাবর বাজিবে ; আনন্দান্ধেব খঘিমানি ভূতানি জায়ন্তে । <sfk wGrt ak NCWS Ubbige Gris &Q RT : Truth is beauty, beauty truth | RICV5 আপিস আদালত কলেজ লাঠি হাতে তাড়া করিয়া আসিলেও সকল কোলাহলের উপরেও এই সুর বাজিবে- সমুদ্রের সঙ্গে, অরণ্যের সঙ্গে, আকাশের আলোকবীণার সঙ্গে সুর মিলাইয়া বাজিবে : আনন্দং সম্প্রায়ন্ত্যভিসংবিশন্তি- য়াহা কিছু সমস্তই পরিপূর্ণ আনন্দের দিকেই চলিয়াছে, ধুকিতে রাস্তার-ধুলার উপরে মুখ থুবড়াইয়া মরিবার দিকে নহে । ፶ জ্যৈষ্ঠ ১৩২২