পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাহিত্যের পথে (k o'ዒ সাহিত্যিক-বন্দনা, তাহাতে কবির ঐহিক পািরত্রিক কোনো লোকসানের কারণ ঘটে নাই। একদা নিষ্ঠাবান হিন্দুরাও মুসলমান আমলে আরবি ফারসি ভাষায় পণ্ডিত ছিলেন ; তাহাতে র্তাহাদের ফোটা ক্ষীণ বা টিকি খাটাে হইয়া যায় নাই | সাহিত্য পুরীর জগন্নাথক্ষেত্রের মতো, সেখানকার ভোজে কাহারও জাতি নষ্ট হয় না । অতএব, সাহিত্যে বাংলাদেশে যে একটি বিপুল মিলনযজ্ঞের আয়োজন হইয়াছে, যাহার বেদি আমাদের চিত্তের মধ্যে, সত্যের উপরে ভাবের উপরে যাহার প্রতিষ্ঠা, সেখানেও হিন্দু-মুসলমানকে র্যাহারা কৃত্রিম বেড়া তুলিয়া পৃথক করিয়া রাখিবার চেষ্টা করিতেছেন তাহারা মুসলমানেরও বন্ধু নহেন । দুই প্রতিবেশীর মধ্যে একটা স্বাভাবিক আত্মীয়তার যোগসূত্রকেও র্যাহারা ছেদন করিতে চাহেন তাহাদের অন্তর্যামীই জানেন, তাহারা ধর্মের নামে দেশের মধ্যে অধৰ্মকে আহবান করিবার পথ খনন করিতেছেন । কিন্তু, আশা করিতেছি, তাহাদের চেষ্টা ব্যর্থ হইবে । কারণ, প্ৰথমেই বলিয়াছি, বাংলাদেশের সাধনা একটি সত্যবস্তু পাইয়াছে ; সেটি তাহার সাহিত্য । এই সাহিত্যের প্রতি আন্তরিক মমত্ববোধ না হওয়াই হিন্দু বা মুসলমানের পক্ষে অসংগত । কোনো অস্বাভাবিক কারণে ব্যক্তিবিশেষের পক্ষে তাহা সম্ভবপর হইতেও পারে, কিন্তু সর্বসাধারণের সহজ বুদ্ধি কখনোই ইহাদের আক্রমণে পরাভূত হইবে না। . বৈশাখ ১৩৩৩ কবির অভিভাষণ এই পরিষদে ২ কবির অভ্যর্থনা পূর্বেই হয়ে গেছে। সেই কবি বৈদেহিক ; সে বাণীমূর্তিতে ভােবরূপে সম্পূর্ণ। দেহের মধ্যে তার প্রকাশ সংকীর্ণ এবং নানা অপ্রাসঙ্গিক উপাদানের সঙ্গে মিশ্ৰিত । আমার বন্ধু’ এইমাত্ৰ যমের সঙ্গে কবির তুলনা করে বলেছেন, যমরাজ আর কবিরাজ দুটি বিপরীত পদাৰ্থ । বোধ হয় তিনি বলতে চান, যমরাজ নাশ করে আর কবিরাজ সৃষ্টি করে । কিন্তু, এরা উভয়েই যে এক দলের লোক, একই ব্যবসায়ে নিযুক্ত, সে কথা অমন ক’রে চাপা দিলে চলবে কেন । নাটকসৃষ্টির সর্বপ্রধান অংশ তার পঞ্চম অঙ্কে । নাটকের মধ্যে যা-কিছু চঞ্চল তা ঝরে পড়ে গিয়ে তার যেটুকু স্থায়ী সেইটুকুই পঞ্চম অঙ্কের চরম তিরস্করণীর ভিতর দিয়ে হৃদয়ের মধ্যে এসে প্রবেশ করে। বিশ্বনাট্যসৃষ্টিতেও পঞ্চম অঙ্কের প্রাধান্য ঋষিরা স্পষ্ট দেখতে পেয়েছিলেন- সেইজন্য সৃষ্টিলীলায় অগ্নি, সূৰ্য, বৃষ্টিধারা, বায়ুর নাট্যনৈপুণ্য স্বীকার করে সব শেষে বলেছেন, মৃত্যুৰ্ধাবতি পঞ্চমঃ । ইনি না থাকলে যা-কিছু ক্ষণকালের তাই জমে উঠে যেটি চিরকালের তাকে আচ্ছন্ন করে দেয়। যেটা স্কুল, যেটা স্থাবর, সেটাকে ঠেলে ফেলবার কাজে মৃত্যু নিয়ত ধাবমান । ভয়াদস্যাগ্নিস্তপতি ভয়াত্তপতি সূৰ্যঃ । ভয়াদিন্দ্ৰশ্চ বায়ুশ্চ মৃত্যুধাবতি পঞ্চমঃ । এই যদি হয় যমরাজের কাজ, তবে কবির কাজের সঙ্গে এর মিল আছে বৈকি। ক্ষণকালের তুচ্ছতা থেকে, জীর্ণতা থেকে, নিত্যকালের আনন্দরূপকে আবরণমুক্ত ক'রে দেখাবার ভার কবির। সংসারে প্ৰথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ অঙ্কে নানাপ্রকার কাজের লোক নানাপ্রকার প্রয়োজনসাধনে প্রবেশ করেন ; কিন্তু কবি আসেন। ‘পঞ্চমঃ’ ; আশু প্ৰয়োজনের সদ্যঃপাতী আয়োজনের যবনিকা সরিয়ে ফেলে অহৈতুকের রসস্বরূপকে বিশুদ্ধ ক'রে দেখাতে । ১. প্রেসিডেন্সি কলেজের রবীন্দ্ৰ-পরিষদ ২ সুরেন্দ্রনাথ দাসগুপ্ত । S SR|| || KOVO