পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কালান্তর どかど 、 এক ঝোক আপাস কবিতে রাজি হয় তা হলে ভাবনা নেই । কিন্তু মানুষের মন । তার কোনো-একটা তারে যদি অত্যন্ত বেশি টান পড়ে তবে সারা যায। বিগডে, তখন সংগীতেৰ দোহাই পাড়লেও সংগত মাটি হয় । ঠিক জানি না। কী ভাবে মহাত্মাজি এ সম্বন্ধে চিন্তা করছেন । হযতো গোল-টেবিল-বৈঠকে আমাদেব সামালত দাবির জোর অক্ষঃ বাখাই আপাতত সব চেয়ে গুরুতর প্রয়োজন বলে তার মনে হতে পাবে । দুই পক্ষই আপন অ্যাপন জিদে সমান অটল হযে বসলে কাজ এগোবে না । এ কথা সত্য ! এ ক্ষেত্রে এক পক্ষে ত্যাগ স্বীকার করে মিটমাট হয়ে গেলে উপস্থিত রক্ষা হয় । একেই বলে ডিপ্লোম্যাসি । পলিটিকসে প্রথম থেকেই মোলো-আনা প্ৰাপ্যের উপর চেপে বসলে ষোলো-আনাই খোযাতে হয । যাবা অদরদর্শী কৃপণের মতো অত্যন্ত বেশি টানাটানি না করে আপাস কবিতে জানে তারাই জেতে । ইংরেজের এই গুণ আছে, নীেকোডুবি বাচাতে গিযে অনেকটা মাল ইংরেজ জলে ফেলে দিতে পারে । আমার নিজের বিশ্বাস বর্তমান আপসেবা প্ৰস্তাবে ইংরেজেব কাছে আমরা যে প্ৰকাণ্ড ক্ষতি-স্বীকাৰ দাবি করছি সেটা যুবোপেৰ আর-কোনো জাতিৰ কাছে একেবাবেই খাটত না--- তারা আগাগোণ্ডাই ঘষি উচিয়ে কথাটা সম্পূর্ণ চাপা দেবার চেষ্টা করত । রাষ্ট্রনৈতিক ব্যাপারে ইংরেজের সবুদ্ধি বিখ্যাত ইংরেজ সবখানির দিকে তাকিযে অনেকখানি সহা করতে পাবে । এই বুদ্ধির প্রযোজন যে আমাদেব নেই, এ কথা গোযারের কথা : আখেরে গোযারেব হার হয়ে থাকে { রাষ্টিক অধিকাৰ সম্বন্ধে এক গুযে ভাবে দাব-কষাকষি নিযে হিন্দু মুসলমানে মন-কষাকষিকে অত্যন্ত বেশিদব এগোতে দেওয়া শত্রুপক্ষোিব আনন্দবর্ধনের প্রধান উপায । আমার বক্তব্য। এই যে, উপস্থিত কাজ -উদ্ধারেব খাতিরে আপাতত নিজের দাবি খাটো করেও একটা মিটমাট কবা সম্ভব হয় তো হোক, কিন্তু তবু আসল কথাটাই বাকি বইল । পলিটিকসের ক্ষেত্রে বাইবে থেকে যেটুক তালি-দেওয়া মিল হতে পারে সে মিলে আমাদের চিরকালের প্রযোজন টিকবে না ; এমন-কি, পলিটিকসে ও এ তালিটুকু বরাবর অটুট থাকবে এমন আশা নেই, ঐ ফকির জোডটার কাছে বারে বাবেই টান পড়বে | যেখানে গোডায্য বিচ্ছেদ সেখানে আগায্য জল ঢেলে গাছকে চিরদিন তাজা বাখা অসম্ভব ; আমাদের মিলতে হবে সেই গোডায়, নইলে কিছুতে কল্যাণ নেই । এতদিন সেই গোডার দিকে এক রকমের মিল ছিল ; পবিস্ম্পবের তফাত মেনেও আমরা পরস্পর কাছাকাছি ছিলাম ! সম্প্রদায়ের গণ্ডীর উপর ঠোকর খেয়ে পড়তে হত না, সেটা পেরিয়েও মানুষে মানুষে মিলের যথেষ্ট জায়গা ছিল ! হঠাৎ এক সময়ে দেখা গেল, দুই পক্ষই আপনি ধর্মেন অভিমানকে উচিয়ে তুলতে লেগেছে । যতদিন আমাদের মধ্যে ধর্মবোধ সহজ ছিল ততদিন গোডামি থাকা সত্ত্বেও কোনো হাঙ্গাম বাধে নি । কিন্তু, এক সময়ে যে কাবণেই হোক, ধর্মের অভিমান যখন উগ্র হয়ে উঠল। তখন থেকে সম্প্রদায়ের কাটাব বেড়া পরস্পরকে ঠেকাতে ও খোচাতে শুরু করলে । আমরাও মসজিদের সামনে দিয়ে প্রতিমা নিয়ে যাবার সময় কিছু অতিরিক্ত জিদের সঙ্গে ঢাকে কাঠি দিলুম, অপর পক্ষেও কোরবানির উৎসাহ পূর্বের চেয়ে কোমর বেঁধে বাড়িযে তুললে, সেটা আপন আপন ধর্মের দাবি মেটাবার খাতির নিয়ে নয়, পরস্পরের ধর্মের অভিমানকে আঘাত দেবার স্পধা নিয়ে । এই-সমস্ত উৎপাতের শুরু হয়েছে শহরে, যেখানে মানুষে মানুষে প্রকৃত মেলামেশা নেই বলেই পরস্পরের প্রতি দরদ থাকে না । ধর্মমত ও সমাজরীতি সম্বন্ধে হিন্দু-মুসলমানে শুধু প্ৰভেদ নয়, বিরুদ্ধতা আছে, এ কথা মানতেই হবে । অতএব আমাদের সাধনার বিষয় হচ্ছে, তৎসত্ত্বেও ভালোরকম করে মেলা চাই ! এই সাধনায় সিদ্ধিলাভ আমাদের না হলে নয় । কিন্তু এর একান্ত আবশ্যকতার কথা আমাদের সমস্ত হৃদয়মন দিয়ে আজও ভাবতে আরম্ভ করি নি । একদা খিলাফতের সমর্থন করে মহাত্মাজি মিলনের সেতু নির্মাণ করতে পারবেন মনে করেছিলেন । কিন্তু “এহ বাহা’ ! এটা গোড়াকার কথা নয়, এই খেলাফত সম্বন্ধে মতভেদ থাকা অন্যায় মনে করি নে, এমন-কি, মুসলমানদের মধ্যেই যে থাকতে পারে তার প্রমাণ হয়েছে । নানা উপলক্ষে এবং বিনা উপলক্ষে সর্বদা আমাদের পরস্পরের সঙ্গ ও সাক্ষাৎ-আলাপ চাই । যদি