পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শাপমোচন । >ፃ রাজা হাত ধরে বললে, “একদিন সইতে পারবে আপনারই অস্তিরিক রসের দাক্ষিণ্যে। কুত্রীর আত্মত্যাগে সুন্দরের সার্থকতা।” * ভ্র কুটিল করে মহিষী বললে, “অসুন্দরের জন্তে তোমার এই অমুকম্পার অর্থ বুঝি নে। ওই শোনো, উষার প্রথম কোকিলের ডাক। অন্ধকারের মধ্যে তার আলোকের অনুভূতি। আজ সুর্যোদয়মুহূর্তে তোমারও প্রকাশ হোক আমার দিনের মধ্যে, এই আশায় রইলেম ।” রাজা গাইলেন— বাহিরে ভুল ভাঙবে যখন অস্তরে ভুল ভাঙবে কি । বিষাদ বিষে জলে শেষে রসের প্রসাদ মাঙবে কি । রৌদ্রদাহ হলে সারা নামবে কি ওর বর্ষাধারা, লাজের রাঙা মিটলে হৃদয় প্রেমের রঙে রাঙবে কি । যতই যাবে দূরের পানে বাধন ততই কঠিন হয়ে টানবে না কি ব্যথার টানে। অভিমানের কালো মেঘে বাদল হাওয়া লাগবে বেগে, নয়নজলের আবেগ তখন কোনোই বাধা মানবে কি ৷ মহিষী স্তব্ধ হয়ে রইল। রাজা বললে, “আচ্ছা, কথা তোমার রাখব, কিন্তু তাতে ইচ্ছা তোমার পূর্ণ হবে না।” জলে উঠল আলো, আবরণ গেল ঘুচে, দেখা হল । টলে উঠল যুগলের সংসার। "কী অন্যায়, কী নিষ্ঠুর বঞ্চন” বলতে বলতে কমলিক ঘর থেকে ছুটে পালিয়ে গেল। তাকে ডাক দিলে রাজার জগৎ থেকে— না, যেয়ে না, যেয়ে নাকে । মিলনপিয়াসি মোরা, কথা রাখে । আজও বকুল আপনহার, হায় রে, ফুল ফোটানো হয় নি সারা, সাজি ভরে নি, পথিক ওগো, থাকো থাকে ॥ ա