পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

У о о রবীন্দ্র-রচনাবলী মহিষীর সমস্ত দেহ কম্পিত। ঝিল্লিঝংকৃত রাত। কৃষ্ণপক্ষের চাদ দিগন্তে । অস্পষ্ট আলোয় অরণ্য কথা কয় যেন স্বপ্নে। বোবা বনের ভাষাহীন বাণী লাগল মহিষীর অঙ্গে অঙ্গে। কখন নাচ আরম্ভ হল সে জানে না। এ নাচ কোন জন্মাস্তরের, কোন লোকাস্তরের। বীণায় বাজে পরজের বিহবল মীড়। কমলিকা আপন-মনে বলে, ‘ওগো কাতর, ওগো হতাশ, আর ডেকো ন । আর দেরি নেই, দেরি নেই।’ কৃষ্ণপক্ষের চাদ ডুবেছে অমাবস্তার তলায়। আঁধারের ডাক গভীর। রাজমহিষী উঠে দাড়িয়ে বলে, “যাব আজ। আর ভয় করি নে আমার দৃষ্টিকে।” পথের শুকনো পাতা পায়ে পায়ে বাজিয়ে দিয়ে গেল সে অশথতলায়— সেখানে বীণা বাজছে । মোর বীণা ওঠে কোন স্বরে বাজি কোন নব চঞ্চল ছন্দে । মম অন্তর কম্পিত আজি নিখিলের হৃদয়স্পন্দে । আসে কোন তরুণ অশাস্ত, উড়ে পীতবসনপ্রান্ত, আলোকের নৃত্যে বনান্ত মুখরিত অধীর আনন্দে। অস্বরপ্রাঙ্গণমাঝে নি:স্বর মঞ্জীর গুঞ্জে । অশ্রত সেই তালে বাজে করতালি পল্লবপুঞ্জে । কণর পদপরশন-আশা তৃণে তৃণে অপিল ভাষা, সমীরণ বন্ধনহীরা উন্মন কোন বনগন্ধে । বীণা থামল । মহিষী থমকে দাড়াল। রাজা বললে, “ভয় কোরো না, প্রিয়ে, ভয় কোরো না।”