পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রথযাত্রা Ꮌ © ১ সৈনিক। কী বল তো । ১ নাগরিক। ত্রেতাযুগে একবার যে কাণ্ড ঘটেছিল, এখন তাই ঘটবে। ১ সৈনিক। আরে, ত্রেতাযুগে তো লঙ্কাকাণ্ড ঘটেছিল। ১ নাগরিক। সে নয়, সে নয়। ২ সৈনিক। কিষ্কিন্ধ্যাকাণ্ড ? ১ নাগরিক। তারই কাছাকাছি। সেই-যে শূদ্র তপস্যা করতে গিয়েছিল, মহাকাল তাতেই তো সেদিন ক্ষেপে উঠেছিলেন। তার পর রামচন্দ্র শূদ্রের মাথা ৮ কেটে তবে বাবাকে শাস্ত করেছিলেন । ৩ সৈনিক । আজ তো সে ভয় নেই, আজ ব্রাহ্মণই তপস্যা ছেড়ে দিয়েছে, শূত্রের তো কথাই নেই। ১ নাগরিক। এখনকার শূত্রের কেউ কেউ লুকিয়ে লুকিয়ে শাস্ত্র পড়তে আরম্ভ করেছে। ধরা পড়লে বলে, আমরা কি মানুষ নই। স্বয়ং কলিযুগ শূদ্রের কানে মন্ত্র দিতে বসেছে যে তারা মানুষ। রথ যে চলে না তাতে মহাকালের দোষ কী— না চললেই ভালো। যদি চলতে শুরু করে তা হলে চন্দ্রস্বর্য গুড়িয়ে ফেলবে। শূত্র চোখ রাঙিয়ে বলে কিনা আমরা কি মানুষ নই? ! কালে কালে কতই শুনব ! ১ সৈনিক। আজ শূত্র পড়ছে শাস্ত্র, কাল ব্রাহ্মণ ধরবে লাঙল ! সর্বনাশ ! ২ সৈনিক। তা হলে চল, ওদের পাড়ায় গিয়ে একবার কষে হাত চালানো যাক। ওরা মানুষ না আমরা মানুষ, প্রত্যক্ষ দেখিয়ে দিই। ২ নাগরিক। রাজাকে কে গিয়ে বলেছে, কলিযুগে শাস্ত্রও চলে না, অস্ত্রও চলে না, একমাত্র চলে স্বর্ণমুদ্র। রাজা তাই আমাদের ধনপতি শেঠজিকে তলব করেছেন। ধনপতি টান দিলেই রথ চলবে এইরকম সকলের বিশ্বাস । ১ সৈনিক । বেনের টানে যদি রথ চলে তা হলে আমরা অস্ত্র গলায় বেঁধে জলে ডুবে মরব। ২ সৈনিক। তা, রাগ করলে চলবে কেন । বেনের টান আজকাল সব জায়গাতেই লেগেছে। এমন-কি, পুষ্পধন্থর ছিলেটা বেনের টানেই চঞ্চল হয়ে ওঠে। তার তীরগুলো বেনের ঘরেই তৈরি। ৩ সৈনিক। তা সত্যি, আজকাল আমাদের রাজত্বে রাজা থাকেন সামনে, কিন্তু পিছনে থাকে বেনে । ১ সৈনিক। পিছনেই থাকে তো থাকৃ-না— আমরা তো থাকি ডাইনে-বায়ে, মান তো আমাদেরই।