পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রথযাত্রা ᎼᏬᎼ ২ ধনিক। জানি বৈকি। যখন এরা গুহায় গিয়ে পৌছল, দেখল, প্ৰভু পদ্মাসনে দুই পা আটকে চিত হয়ে পড়ে আছেন। সাড়াশবা নেই। বহুকষ্টে ধ্যান ভাঙানো হল । কিন্তু পা দুখানা আড়ষ্ট কাঠ হয়ে গেছে, চলে না । ১ নাগরিক। শ্রীচরণের দোষ কী । তারা আজ ৬৫ বছরের মধ্যে একবারও চলার নাম করে নি। তা, বাবাজি বললেন কী ? ২ ধনিক। বলা-কওয়ার বালাই নেই। চাঞ্চল্যের অপবাদ দিয়ে জিবটাকে একেবারে কেটেই ফেলেছেন । গো গো করতে লাগলেন, তার থেকে যার যে-রকম খেয়াল সে সেই রকমেরই অর্থ করে নিলে। ১ ধনিক। তার পরে ? ২ ধনিক। তার পর ধরাধরি করে বাবাজিকে রথতলা পর্যন্ত আনা গেল। কিন্তু যেমনি দড়ি ধরলেন রথের চাকা মাটির মধ্যে বসে যেতে লাগল। ১ ধনিক। হা, হা, বাবাজি নিজের মনটাকে যেমন গভীরে ডুবিয়েছেন, মহাকালের রথটাকে স্বদ্ধ তেমনি তলিয়ে দিচ্ছিলেন বুঝি ? ২ ধনিক। ওঁর পয়ষট্টি বৎসরের উপবাসের ভারে চাকা বসে গেল। একদিনের উপবাসের ধাক্কাতেই আমাদের পা চলতে চায় না। ১ নাগরিক। উপবাসের ভারের কথা বলছ, তোমাদের অহংকারের ভারটা বড়ো কম নয় । ২ নাগরিক। সে ভার আপনাকেই আপনি চূর্ণ করে। দেখব আজ তোমাদের ধনপতির মাথা কেমন হেঁট না হয় । ১ ধনিক । আচ্ছা দেখো । বাবা মহাকালের ভোগ জোগায় কে। সে তো আমাদের ধনপতি। যদি বন্ধ করে দেয় তা হলে তার যে চলা না-চল দুই সমান হয়ে উঠবে। পেট চলা হল সব চলার মূলে। মন্ত্রী ও ধনপতির প্রবেশ ধনপতি। মন্ত্রীমশায়, আজ আমাকে ডাক পড়ল কেন । মন্ত্রী। রাজ্যে যখনই কোনো অনর্থপাত হয় তখনই তো তোমাকেই সর্বাগ্রে ডাক পড়ে । ধনপতি। অর্থপাতে যার প্রতিকার সম্ভব আমার দ্বারা তার ক্রাট হয় না। কিন্তু আজকের সংকটটা কী রকমের । মন্ত্রী । শুনেছ বোধ হয়, মহাকালের রথ আজ কারে হাতের টানেই চলছে না।