পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ Ֆ Գծ নানাপ্রকার সন্দিগ্ধ জিজ্ঞাসাবাদ আরম্ভ করিলেন তখন সে-সকল কথা গৌরীর কর্ণগোচর হইতে লাগিল। অভিমানিনী স্বল্পভাষিণী নারী অপমানে আহত সিংহিনীর ন্যায় অস্তরে অন্তরে উদ্দীপ্ত হইতে লাগিলেন এবং এই উন্মত্ত সন্দেহ দম্পতির মাঝখানে প্রলয়খড়েগর মতো পড়িয়া উভয়কে একেবারে বিচ্ছিন্ন করিয়া দিল । গৌরীর কাছে র্তাহার তীব্র সন্দেহ প্রকাশ পাইয়া যখন একবার লজ্জা ভাঙিয়া গেল, তখন পরেশ স্পষ্টতই প্রতিদিন পদে পদে আশঙ্কা ব্যক্ত করিয়া স্ত্রীর সহিত কলহ করিতে আরম্ভ করিল এবং গৌরী যতই নিরুত্তর অবজ্ঞা এবং কষাঘাতের ন্তায় তীক্ষুকটাক্ষ দ্বারা তাহাকে আপাদমস্তক যেন ক্ষতবিক্ষত করিতে লাগিল, ততই তাহার সংশয়মত্ততা আরো যেন বাড়িবার দিকে চলিল । এইরূপ স্বামীমুখ হইতে প্রতিহত হইয়া পুত্রহীন তরুণী ধর্মে মন দিল। হরিসভার নবীন প্রচারক ব্রহ্মচারী পরমানন্দস্বামীকে ডাকিয়া মন্ত্র লইল এবং তাহার নিকট ভাগবতের ব্যাখ্যা শুনিতে আরম্ভ করিল। নারীন্ধদয়ের সমস্ত ব্যর্থ স্নেহ প্রেম কেবল ভক্তি-আকারে পুঞ্জীভূত হইয়া গুরুদেবের পদতলে সমপিত হইল। পরমানন্দের সাধুচরিত্র সম্বন্ধে দেশবিদেশে কাহারো মনে সংশয়মাত্র ছিল না। সকলে তাহাকে পূজা করিত। পরেশ ইহার সম্বন্ধে মুখ ফুটিয়া সংশয় প্রকাশ করিতে পারিতেন না বলিয়াই তাহা গুপ্ত ক্ষতের মতে ক্রমশ তাহার মর্মের নিকট পর্যন্ত খনন করিয়া চলিয়াছিল । একদিন সামান্য কারণে বিষ উদগীরিত হইয়া পড়িল । স্ত্রীর কাছে পরমানন্দকে উল্লেখ করিয়৷ ‘কুশচরিত্র ভগু বলিয়া গালি দিলেন এবং কহিলেন, “তোমার শালগ্রাম স্পর্শ করিয়া শপথপূর্বক বলে দেখি, সেই বকধাৰ্মিককে তুমি মনে মনে ভালোবাস না।” দলিত ফণিনীর ন্যায় মুহূর্তের মধ্যেই উদগ্র হইয়া মিথ্যা স্পর্ব দ্বারা স্বামীকে বিদ্ধ করিয়া গৌরী রুদ্ধকণ্ঠে কহিল, “ভালোবাসি, তুমি কী করিতে চাও করে।” পরেশ তৎক্ষণাৎ ঘরে তালাচাবি লাগাইয়া তাহাকে রুদ্ধ করিয়া আদালতে চলিয়া ८१ळा । অসহ রোষে গৌরী কোনোমতে দ্বার উন্মোচন করাইয়া তৎক্ষণাৎ বাড়ি হইতে বাহির হইয়া গেল। পরমানন্দ নিভৃত ঘরে জনহীন মধ্যাহ্নে শাস্ত্রপাঠ করিতেছিলেন। হঠাৎ অমেঘবাহিনী বিদ্যুল্পতার মতে গৌরী ব্রহ্মচারীর শাস্বাধ্যয়নের মাঝখানে আসিয়া ভাঙিয়া পড়িল । গুরু কহিলেন, “এ কী ।”