পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২০১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ >brS দেখিল, স্বামী ভূতলে পড়িয়া গে। গো করিতেছে, মুখ দিয়া ফেনা পড়িতেছে, চন্থতারকা কুপালে উঠিয়াছে। দক্ষিণ বদ্ধমুষ্টি হইতে পত্ৰখনি ছাড়াইয়া লইয়। তাড়াতাড়ি ডাক্তার ডাকিয়া পাঠাইল । ডাক্তার আসিয়া কহিল, আপোপ্লেক্সি– তখন রোগীর মৃত্যু হইয়াছে। সেইদিন মফস্বলে পরেশের একটি জরুরি মকদ্দমা ছিল। সন্ন্যাসীর এতদূর পতন হইয়াছিল যে, তিনি সেই সংবাদ লইয়া গৌরীর সহিত সাক্ষাতের জন্য প্রস্তুত হইয়াছিলেন। সদ্যবিধবা গৌরী যেমন বাতায়ন হইতে গুরুদেবকে চোরের মতো পুষ্করিণীর তটে দেখিল, তৎক্ষণাৎ বজ্রচকিতের ন্যায় দৃষ্টি অবনত করিল। গুরু যে কোথা হইতে কোথায় নামিয়াছেন, তাহ যেন বিদ্যুতালোকে সহসা এই মুহূর্তে তাহার হৃদয়ে উদভাসিত হইয়া উঠিল। গুরু ডাকিলেন, "গৌরী।” গৌরী কহিল, “আসিতেছি, গুরুদেব ।” মৃত্যুসংবাদ পাইয়। পরেশের বন্ধুগণ যখন সৎকারের জন্য উপস্থিত হইল, দেখিল, গৌরীর মৃতদেহ স্বামীর পার্শ্বে শয়ান। সে বিষ খাইয়া মরিয়াছে। আধুনিক কালে এই আশ্চর্য সহমরণের দৃষ্টাস্তে সতীমাহাত্ম্যে সকলে স্তম্ভিত হইয়া গেল। গ্রাবণ ১৩০৭ দুর্বদ্ধি ভিটা ছাড়িতে হইল। কেমন করিয়া, তাহ খোলসা করিয়া বলিব না, আভাস দিব মাত্র। আমি পাড়াগেয়ে নেটিভ ডাক্তার, পুলিসের থানার সম্মুখে আমার বাড়ি। যমরাজের সহিত আমার যে পরিমাণ আনুগত্য ছিল দারোগাবাবুদের সহিত তাহ অপেক্ষা কম ছিল না, সুতরাং নর ও নারায়ণের দ্বারা মানুষের যত বিবিধ রকমের পীড়া ঘটিতে পারে তাহ আমার স্থগোচর ছিল। যেমন মণির দ্বারা বলয়ের এবং বলয়ের দ্বারা মণির শোভা বৃদ্ধি হয় তেমনি আমার মধ্যস্থতায় দারোগার এবং দারোগার মধ্যস্থতায় আমার উত্তরোত্তর আর্থিক শ্ৰীবৃদ্ধি ঘটিতেছিল। এই-সকল ঘনিষ্ঠ কারণে হাল নিয়মের কৃতবিদ্য দারোগ ললিত চক্রবর্তীর সঙ্গে