পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Sసి U রবীন্দ্র-রচনাবলী পাত্র-সন্ধানে বাহির হইলেন। রাজশাহিতে র্তাহার এক আত্মীয় উকিলের বাড়িতে গিয়া আশ্রয় লইলেন। এই উকিলের মক্কেল ছিলেন জমিদার গোরস্বন্দর চৌধুরী। তাহার একমাত্র পুত্র বিভূতিভূষণ এই উকিলের অভিভাবকতায় কলেজে পড়াশুনা করিত। ছেলেটি কখন যে মেয়েটিকে আসিয়া দেখিয়াছিল তাহা ভগবান প্রজাপতিই জানিতেন । কিন্তু প্রজাপতির চক্রান্ত যজ্ঞেশ্বরের বুঝিবার সাধ্য ছিল না। তাই বিভূতি সম্বন্ধে র্তাহার মনে কোনোপ্রকার তুরাশা স্থান পায় নাই। নিরীহ যজ্ঞেশ্বরের অল্প আশা, অল্প সাহস ; বিভূতির মতো ছেলে যে র্তাহার জামাই হইতে পারে এ তাহার সম্ভব বলিয়া বোধ হইল না। উকিলের যত্বে একটি চলনসই পাত্রের সন্ধান পাওয়া গেছে। . তাহার বুদ্ধিমুদ্ধি না থাক, বিষয়-আশয় আছে। পাস একটিও দেয় নাই বটে কিন্তু কালেক্টরিতে ৩,২৭৫২ টাকা খাজনা দিয়া থাকে। পাত্রের দল একদিন আসিয়া মেয়েটিকে পছন্দ করিয়া ক্ষীরের ছাচ, নারিকেলের মিষ্টান্ন ও নাটোরের কাচাগোল্লা খাইয়া গেল। বিভূতি তাহার অনতিকাল পরে আসিয়া খবর শুনিলেন। যজ্ঞেশ্বর মনের আনন্দে তাহাকেও কঁাচাগোল্লা খাওয়াইতে উদ্যত হইলেন। কিন্তু ক্ষুধার অত্যন্ত অভাব জানাইয়া বিভূতি কিছু খাইল না। কাহারে সহিত ভালো করিয়া কথাই কহিল না, বাড়ি চলিয়া গেল । সেইদিনই সন্ধ্যাবেলায় উকিলবাবু বিভূতির কাছ হইতে এক পত্র পাইলেন। মর্মটা এই, যজ্ঞেশ্বরের কন্যাকে তাহার বড়ো পছন্দ এবং তাহাকে সে বিবাহ করিতে উৎসুক । উকিল ভাবিলেন, "এ তো বিষম মুশকিলে পড়িলাম। গৌরসুন্দরবাবু ভাবিবেন, আমিই আমার আত্মীয় কন্যার সহিত র্তাহার ছেলের বিবাহের চক্রান্ত করিতেছি।’ অত্যন্ত ব্যস্ত হইয়া তিনি যজ্ঞেশ্বরকে দেশে পাঠাইলেন, এবং পূর্বোক্ত পাত্রটির সহিত বিবাহের দিন যথাসম্ভব নিকটবর্তী করিয়া দিলেন। বিভূতিকে ডাকিয়৷ অভিভাবক মহাশয় পড়াশুনা ছাড়া অার-কোনো দিকে মন দিতে বিশেষ করিয়া নিষেধ করিলেন। শুনিয়া রাগে বিভূতির জেদ চার গুণ বাড়িয়া গেল। বিবাহের আয়োজন উদ্যোগ চলিতেছে এমন সময় একদিন যজ্ঞেশ্বরের খোড়ে ঘরে বিভূতিভূষণ স্বয়ং আসিয়া উপস্থিত। যজ্ঞেশ্বর ব্যস্ত হইয়া কহিলেন, “এসো বাবা, এসো।” কিন্তু, কোথায় বসাইবেন, কী খাওয়াইবেন, কিছুই ভাবিয়া পাইলেন না। এখানে নাটোরের র্কাচাগোল্লা কোথায় !