পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ՀՖՏ রবীন্দ্র-রচনাবলী মন্মথ দত্ত নূতন গ্রন্থকার। তাহার লেখার ধরন অনেকটা অমলেরই মতে, এইজন্ত আমল তাহাকে কখনো প্রশংসা করিত না ; মাঝে মাঝে চারুর কাছে তাহার লেখা বিকৃত উচ্চারণে পড়িয়া বিদ্রুপ করিত— চারু অমলের নিকট হইতে সে বই কাড়িয়া লইয়া অবজ্ঞাভরে দূরে ফেলিয়া দিত। - আজ যখন অমলের পদশব্দ শুনিতে পাইল তখন সেই মন্মথ দত্তর ‘কলকণ্ঠ’-নামক বই মুখের কাছে তুলিয়া ধরিয়া চারু অত্যন্ত একাগ্রভাবে পড়িতে আরম্ভ করিল। অমল বারান্দায় প্রবেশ করিল, চারু লক্ষও করিল না। অমল কহিল, "কী বোঠান, কী পড়া হচ্ছে।” চারুকে নিরুত্তর দেখিয়া অমল চৌকির পিছনে আসিয়া বইটা দেখিল। কহিল, “মন্মথ দত্তর গলগণ্ড ।” r চারু কহিল, "আঃ, বিরক্ত কোরো না, আমাকে পড়তে দাও।” পিঠের কাছে দাড়াইয়া অমল ব্যঙ্গস্বরে পড়িতে লাগিল, “আমি তৃণ, ক্ষুদ্র তৃণ ; ভাই রক্তাম্বর রাজবেশধারী অশোক, আমি তৃণমাত্র ! আমার ফুল নাই, আমার ছায়া নাই, আমার মস্তক আমি আকাশে তুলিতে পারি না, বসন্তের কোকিল আমাকে আশ্রয় করিয়া কুহুস্বরে জগৎ মাতায় না— তবু ভাই অশোক, তোমার ওই পুষ্পিত উচ্চ শাখা হইতে তুমি আমাকে উপেক্ষা করিয়ো না ; তোমার পায়ে পড়িয়া আছি আমি তৃণ, তবু আমাকে তুচ্ছ করিয়ো না।” অমল এইটুকু বই হইতে পড়িয়া তার পরে বিদ্রুপ করিয়া বানাইয়া বলিতে লাগিল, “আমি কলার কাদি, কাচকলার কাদি, ভাই কুষ্মাগু, ভাই গৃহচালবিহারী কুষ্মাগু, আমি নিতান্তই কাচকলার কাদি ।” চারু কৌতুহলের তাড়নায় রাগ রাখিতে পারিল না ; হাসিয়া উঠিয়া বই ফেলিয়া দিয়া কহিল, “তুমি ভারি হিংস্কটে, নিজের লেখা ছাড়া কিছু পছন্দ হয় না।” অমল কহিল, “তোমার ভারি উদারতা, তৃণটি পেলেও গিলে খেতে চাও।” চারু । আচ্ছা মশায়, ঠাট্টা করতে হবে না— পকেটে কী আছে বের করে ফেলো । অমল। কী আছে আন্দাজ করো। অনেকক্ষণ চারুকে বিরক্ত করিয়া অমল পকেট হইতে ‘সরোরুহ’-নামক বিখ্যাত মাসিক পত্র বাহির করিল। চারু দেখিল, কাগজে অমলের সেই খাতা’-নামক প্রবন্ধটি বাহির হইয়াছে। চারু দেখিয়া চুপ করিয়া রহিল। অমল মনে করিয়াছিল, তাহার বোঠান খুব