পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ २२ (t অমল। মন্দা-বোঠান, তোমাদের দেশের গল্প বলো, আমি শুনি । লেখার বিষয় সংগ্ৰহ করিবার জন্য অমল সকলের সব কথা কৌতুহলের সহিত শুনিত। সেই কারণে মন্দাকে এখন সে আর পূর্বের ন্যায় সম্পূর্ণ উপেক্ষা করিত না। মন্দার মনস্তত্ত্ব, মন্দার ইতিহাস, এখন তাহার কাছে ঔৎসুক্যজনক। কোথায় তাহার জন্মভূমি, তাহদের গ্রামটি কিরূপ, ছেলেবেলা কেমন করিয়া কাটিত, বিবাহ হইল কবে, ইত্যাদি সকল কথাই সে খুটিয়া খুটিয়া জিজ্ঞাসা করিতে লাগিল। মন্দার ক্ষুত্র জীবনবৃত্তাস্ত সম্বন্ধে এত কৌতুহল কেহ কখনো প্রকাশ করে নাই। মন্দ আনন্দে নিজের কথা বকিয়া যাইতে লাগিল ; মাঝে মাঝে কহিল, "কী বকছি তার ঠিক নাই ।” অমল উৎসাহ দিয়া কহিল, "না, আমার বেশ লাগছে, বলে যাও।” মন্দার বাপের এক কানা গোমস্ত ছিল, সে তাহার দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া করিয়া এক-একদিন অভিমানে অনশনত্রত গ্রহণ করিত, অবশেষে ক্ষুধার জালায় মন্দাদের বাড়িতে কিরূপে গোপনে আহার করিতে আসিত এবং দৈবাৎ একদিন স্ত্রীর কাছে কিরূপে ধরা পড়িয়াছিল, সেই গল্প যখন হইতেছে এবং অমল মনোযোগের সহিত শুনিতে শুনিতে সকৌতুকে হাসিতেছে, এমন সময় চারু ঘরের মধ্যে আসিয়া প্রবেশ করিল। গল্পের স্থত্র ছিন্ন হইয়া গেল। তাহার আগমনে হঠাৎ একটা জমাট সভা ভাঙিয়া গেল, চারু তাহা স্পষ্টই বুঝিতে পারিল। অমল জিজ্ঞাসা করিল, “বউঠান, এত সকাল-সকাল ফিরে এলে যে ।” চারু কহিল, “তাই তো দেখছি। বেশি সকাল-সকালই ফিরেছি।” বলিয়া চলিয়া যাইবার উপক্রম করিল। অমল কহিল, “ভালোই করেছ, বাচিয়েছ আমাকে। আমি ভাবছিলুম, কখন না জানি ফিরবে। মন্মথ দত্তর ‘সন্ধ্যার পাখি’ বলে নূতন বইটা তোমাকে পড়ে শোনাব বলে এনেছি।” চারু । এখন থাকৃ, আমার কাজ আছে। অমল। কাজ থাকে তো আমাকে হুকুম করে, আমি করে দিচ্ছি। চারু জানিত অমল আজ বই কিনিয়া আনিয়া তাহাকে শুনাইতে আসিবে ; চারু ঈর্ষা জন্মাইবার জন্য মন্মথর লেখার প্রচুর প্রশংসা করিবে এবং অমল সেই বইটাকে বিকৃত করিয়া পড়িয়া বিদ্রুপ করিতে থাকিবে । এই-সকল কল্পনা করিয়াই অধৈর্যবশত সে অকালে নিমন্ত্রণগুহের সমস্ত অনুনয়বিনয় লঙ্ঘন করিয়া অমুখের ছুতায় গৃহে চলিয়া