পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ఫిలిచి রবীন্দ্র-রচনাবলী ব্যগ্রতার ভাবে সে শুনিতে লাগিল। উৎসাহে অমলের কণ্ঠ উত্তরোত্তর উচ্চ হইয়া উঠিল। সে পড়িতেছিল— ‘অভিমত্যু যেমন গর্ভবাসকালে কেবল ব্যুহ-প্রবেশ করিতে শিখিয়াছিল, ব্যুহ হইতে নির্গমন শেখে নাই— নদীর স্রোত সেইরূপ গিরিদরীর পাষাণ-জঠরের মধ্যে থাকিয়া কেবল সম্মুখেই চলিতে শিখিয়াছিল, পশ্চাতে ফিরিতে শেখে নাই। হায় নদীর স্রোত, হায় যৌবন, হায় কাল, হায় সংসার, তোমরা কেবল সম্মুখেই চলিতে পার— যে পথে স্মৃতির স্বর্ণমণ্ডিত উপলখণ্ড ছড়াইয়া আস সে পথে আর কোনোদিন ফিরিয়া যাও না । মানুষের মনই কেবল পশ্চাতের দিকে চায়, অনন্ত জগৎ-সংসার সে দিকে ফিরিয়াও তাকায় না।’ এমন সময় মন্দার দ্বারের কাছে একটি ছায়া পড়িল, সে ছায়া মন্দা দেখিতে পাইল। কিন্তু যেন দেখে নাই এরূপ ভান করিয়া অনিমেষদৃষ্টিতে অমলের মুখের দিকে চাহিয়া নিবিড় মনোযোগের সহিত পড়া শুনিতে লাগিল । ছায়া তৎক্ষণাৎ সরিয়া গেল । চারু অপেক্ষা করিয়া ছিল, অমল আসিলেই তাহার সম্মুখে বিশ্ববন্ধু কাগজটিকে যথোচিত লাঞ্ছিত করিবে, এবং প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করিয়া তাহদের লেখা মাসিক পত্রে বাহির করিয়াছে বলিয়া অমলকেও ভর্ৎসনা করিবে । অমলের আসিবার সময় উত্তীর্ণ হইয়া গেল তবু তাহার দেখা নাই। চারু একটা লেখা ঠিক করিয়া রাখিয়াছে ; আমলকে শুনাইবার ইচ্ছা ; তাহাও পড়িয়া আছে। এমন সময়ে কোথা হইতে অমলের কণ্ঠস্বর শুনা যায়। এ যেন মন্দার ঘরে । শরবিদ্ধের মতো সে উঠিয়া পড়িল । পায়ের শব্দ না করিয়া সে দ্বারের কাছে আসিয়া দাড়াইল । অমল যে লেখা মন্দাকে শুনাইতেছে এখনো চারু তাহা শোনে নাই। অমল পড়িতেছিল— ‘মামুষের মনই কেবল পশ্চাতের দিকে চায়-- অনন্ত জগৎ-সংসার সে দিকে ফিরিয়াও তাকায় না।’ চারু যেমন নিঃশব্দে আসিয়াছিল তেমন নিঃশব্দে আর ফিরিয়া যাইতে পারিল না। আজ পরে পরে দুই-তিনটা আঘাতে তাহাকে একেবারে ধৈর্যচ্যুত করিয়া দিল। মন্দা যে একবর্ণও বুঝিতেছে না এবং অমল যে নিতান্ত নিবোধ মূঢ়ের মতে তাহাকে পড়িয়া শুনাইয়া তৃপ্তিলাভ করিতেছে, এ কথা তাহার চীৎকার করিয়া বলিয়া আসিতে ইচ্ছা করিল। কিন্তু না বলিয়া সক্রোধে পদশব্দে তাহা প্রচার করিয়া আসিল । শয়নগৃহে প্রবেশ করিয়া চারু দ্বার সশবে বন্ধ করিল। অমল ক্ষণকালের জন্য পড়ায় ক্ষান্ত দিল । মন্দা হাসিয়া চারুর উদ্দেশে ইঙ্গিত