পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৩৪ রবীন্দ্র-রচনাবলী বুলাইতে স্নেহাৰ্দ্ৰকণ্ঠে জিজ্ঞাসা করিল, “অন্ধকারে তুমি যে একলাটি বসে আছ, চারু ? মন্দা কোথায় গেল।” চারু যেমনটি আশা করিয়াছিল আজ সমস্ত দিন তাহার কিছুই হইল না । সে নিশ্চয় স্থির করিয়াছিল অমল আসিয়া ক্ষমা চাহিবে— সেজন্য প্রস্তুত হইয়া সে প্রতীক্ষা করিতেছিল, এমন সময় ভূপতির অপ্রত্যাশিত কণ্ঠস্বরে সে যেন আর আত্মসম্বরণ করিতে পারিল না— একেবারে র্কাদিয়া ফেলিল । ভূপতি ব্যস্ত হইয়া ব্যথিত হইয়া জিজ্ঞাসা করিল, ‘চারু, কী হয়েছে, চারু।” কী হইয়াছে তাহা বলা শক্ত। এমনই কী হয়েছে। বিশেষ তো কিছুই হয় নাই। অমল নিজের নূতন লেখা প্রথমে তাহাকে না শুনাইয়া মন্দাকে শুনাইয়াছে এ কথা লইয়া ভূপতির কাছে কী নালিশ করিবে । শুনিলে কি ভূপতি হাসিবে না ? এই তুচ্ছ ব্যাপারের মধ্যে গুরুতর নালিশের বিষয় যে কোনখানে লুকাইয়া আছে তাহা খুজিয়া বাহির করা চারুর পক্ষে অসাধ্য। অকারণে সে যে কেন এত অধিক কষ্ট পাইতেছে, ইহাই সম্পূর্ণ বুঝিতে না পারিয়া তাহার কষ্টের বেদন আরো বাড়িয়া উঠিয়াছে। ভূপতি। বলো-না চারু, তোমার কী হয়েছে। আমি কি তোমার উপর কোনো অন্তায় করেছি। তুমি তো জানই, কাগজের ঝঞ্চাট নিয়ে আমি কিরকম ব্যতিব্যস্ত হয়ে অাছি, যদি তোমার মনে কোনো আঘাত দিয়ে থাকি সে আমি ইচ্ছে করে দিই নি । ভূপতি এমন বিষয়ে প্রশ্ন করিতেছে যাহার একটিও জবাব দিবার নাই, সেইজন্য চারু ভিতরে ভিতরে অধীর হইয়া উঠিল ; মনে হইতে লাগিল, ভূপতি এখন তাহাকে নিস্কৃতি দিয়া ছাড়িয়া গেলে সে বঁাচে । ভূপতি দ্বিতীয়বার কোনো উত্তর না পাইয়া পুনর্বার স্নেহসিক্ত স্বরে কহিল, “আমি সর্বদা তোমার কাছে আসতে পারি নে চারু, সেজন্যে অামি অপরাধী, কিন্তু আর হবে না। এখন থেকে দিনরাত কাগজ নিয়ে থাকব না। আমাকে তুমি যতটা চাও ততটাই পাবে।” চারু অধীর হইয়া বলিল, “সেজন্তে নয়।” ভূপতি কহিল, “তবে কী জন্যে ।” বলিয়া থাটের উপর বসিল । চারু বিরক্তির স্বর গোপন করিতে না পারিয়া কহিল, “সে এখন থাক, রাত্রে বলব ।” ভূপতি মুহূর্তকাল স্তন্ধ থাকিয়া কহিল, ”আচ্ছ, এখন থাক।” বলিয়া আস্তে