পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

$88 রবীন্দ্র-রচনাবলী অমল । না দাদা, ওই নিয়ে মিথ্যে দেরি করবার দরকার দেখি নে । চাক । কাজ নেই বাপু— দেরি হলে বুক ফেটে যাবে। তুমি টোপর মাথায় দিয়ে এখনই বেরিয়ে পড়ে। কী জানি, তোমার সাত রাজার ধন মানিকটিকে যদি আর কেউ কেড়ে নিয়ে যায়। অমলকে চারু কোনো ঠাট্টাতেই কিছুমাত্র বিচলিত করিতে পারিল না। চারু। বিলেত পালাবার জন্যে তোমার মনটা বুঝি দৌড়চ্ছে ? কেন, এখানে আমরা তোমাকে মারছিলুম না ধরছিলুম। হ্যাট কোট পরে সাহেব না সাজলে এখনকার ছেলেদের মন ওঠে না। ঠাকুরপো, বিলেত থেকে ফিরে এসে আমাদের মতে কালা আদমিদের চিনতে পারবে তো ? অমল কহিল, “তা হলে আর বিলেত যাওয়া কী করতে।” ভূপতি হাসিয়া কহিল, “কালে রূপ ভোলবার জন্তেই তো সাত সমুদ্র পেরোনো । তা, ভয় কী চারু, আমরা রইলুম, কালোর ভক্তের অভাব হবে না।” ভূপতি খুশি হইয়া তখনই বর্ধমানে চিঠি লিখিয়া পাঠাইল। বিবাহের দিন স্থির হইয়া গেল । দ্বাদশ পরিচ্ছেদ ইতিমধ্যে কাগজখানা তুলিয়া দিতে হইল। ভূপতি খরচ আর জোগাইয়া উঠিতে পারিল না। লোকসাধারণ-নামক একটা বিপুল নির্মম পদার্থের যে সাধনায় ভূপতি দীর্ঘকাল দিনরাত্রি একান্ত মনে নিযুক্ত ছিল সেটা এক মুহূর্তে বিসর্জন দিতে হইল। ভূপতির জীবনে সমস্ত চেষ্টা যে অভ্যস্ত পথে গত বারো বৎসর অবিচ্ছেদে চলিয়া আসিতেছে সেটা হঠাৎ এক জায়গায় যেন জলের মাঝখানে আসিয়া পড়িল । ইহার জন্য ভূপতি কিছুমাত্র প্রস্তুত ছিল না। অকস্মাৎ-বাধাপ্রাপ্ত তাহার এতদিনকার সমস্ত উদ্যমকে সে কোথায় ফিরাইয়া লইয়া যাইবে । তাহারা যেন উপবাসী অনাথ শিশুসন্তানদের মতো ভূপতির মুখের দিকে চাহিল, ভূপতি তাহাদিগকে আপন অন্তঃপুরে করুণাময়ী শুশ্ৰষাপরায়ণ নারীর কাছে আনিয়া দাড় করাইল । নারী তখন কী ভাবিতেছিল। সে মনে মনে বলিতেছিল 'এ কী আশ্চর্ষ, অমলের বিবাহ হইবে সে তো খুব ভালোই। কিন্তু এতকাল পরে আমাদের ছাড়িয়া পরের ঘরে বিবাহ করিয়া বিলাত চলিয়। যাইবে, ইহাতে তাহার মনে একবারও একটুখানির জন্য দ্বিধাও জন্মিল না ? এতদিন ধরিয় তাহাকে যে আমরা এত যত্ব করিয়া রাখিলাম,