পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ Տ 8Գ কেন । কেন সে দূরে দূরে পালাইয় বেড়াইতেছে। বিদায়কালকে কেন সে ইচ্ছাপূর্বক এমন বিরোধতিক্ত করিয়া তুলিতেছে। / বিছানায় শুইয়া ভাবিতে ভাবিতে সে হঠাং চমকিয়া উঠিয়া বসিল । হঠাৎ মন্দার কথা মনে পড়িল । যদি এমন হয়, অমল মন্দাকে ভালোবাসে । মন্দা চলিয়া গেছে বলিয়াই যদি অমল এমন করিয়া— ছি! অমলের মন কি এমন হইবে । এত ক্ষুদ্র ? এমন কলুষিত ? বিবাহিত রমণীর প্রতি তাহার মন যাইবে ? অসম্ভব। সন্দেহকে একান্ত চেষ্টায় দূর করিয়া দিতে চাহিল কিন্তু সন্দেহ তাহাকে সবলে দংশন করিয়া রহিল । এমনি করিয়া বিদায়কাল আসিল । মেঘ পরিষ্কার হইল না। অমল আসিয়া কম্পিতকণ্ঠে কহিল, “বোঠান, আমার যাবার সময় হয়েছে। তুমি এখন থেকে দাদাকে দেখো । তার বড়ো সংকটের অবস্থা– তুমি ছাড়া তার আর সাস্তুনার কোনো পথ নেই।” অমল ভূপতির বিষগ্ন স্নান ভাব দেখিয়া সন্ধান দ্বারা তাহার দুর্গতির কথা জানিতে পারিয়াছিল। ভূপতি যে কিরূপ নিঃশব্দে আপন দুঃখদুর্দশার সহিত একলা লড়াই করিতেছে, কাহারো কাছে সাহায্য বা সাস্তুনা পায় নাই, অথচ আপন আশ্রিত পালিত আত্মীয়স্বজনদিগকে এই প্রলয়সংকটে বিচলিত হইতে দেয় নাই, ইহা সে চিন্তা করিয়া চুপ করিয়া রহিল। তার পরে সে চারুর কথা ভাবিল, নিজের কথা ভাবিল, কর্ণমূল লোহিত হইয়া উঠিল, সবেগে বলিল, ‘চুলোয় যাক আষাঢ়ের চাদ আর অমাবস্তার আলো । আমি ব্যারিস্টার হয়ে এসে দাদাকে যদি সাহায্য করতে পারি তবেই অমি পুরুষমানুষ ।” গত রাত্রি সমস্ত রাত জাগিয়া চারু ভাবিয়া রাখিয়াছিল অমলকে বিদায়কালে কী কথা বলিবে— সহাস্য অভিমান এবং প্রফুল্ল ঔদাসীন্যের দ্বারা মাজিয়া মজিয়া সেই কথাগুলিকে সে মনে মনে উজ্জল ও শানিত করিয়া তুলিয়াছিল। কিন্তু বিদায় দিবার সময় চারুর মুখে কোনো কথাই বাহির হইল না । সে কেবল বলিল, “চিঠি লিখবে cउl, उप्रशब्ज ?” অমল ভূমিতে মাথা রাখিয়া প্রণাম করিল, চারু ছুটিয়া শয়নঘরে গিয়া দ্বার বন্ধ করিয়া দিল ।