পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ ২৬৩ এমনি করিয়া বাচিতে হইবে। যে আশ্রয় চূর্ণ হইয়া ভাঙিয়া গেছে তাহার ভাঙা ইটকাঠগুল ফেলিয়া যাইতে পারিব না, কাধে করিয়া বহিয়া বেড়াইতে হইবে ? ভূপতি চারুকে আসিয়া কহিল, “না, সে আমি পারিব না।” মুহূর্তের মধ্যে সমস্ত রক্ত নামিয়া গিয়া চারুর মুখ কাগজের মতো শুষ্ক সাদা হইয়া গেল, চারু মুঠা করিয়া খাট চাপিয়া ধরিল। তৎক্ষণাৎ ভূপতি কহিল, "চলো চারু, আমার সঙ্গেই চলে।” চারু বলিল, “না, থাকৃ।” বৈশাখ-আগ্রহায়ণ ১৩০৮ দপহরণ কী করিয়া গল্প লিখিতে হয়, তাহা সম্প্রতি শিথিয়াছি। বঙ্কিমবাবু এবং সার ওয়ালটার স্কট পড়িয়া আমার বিশেষ ফল হয় নাই। ফল কোথা হইতে কেমন করিয়া হইল, আমার এই প্রথম গল্পেই সেই কথাটা লিখিতে বসিলাম । আমার পিতার মতামত অনেকরকম ছিল ; কিন্তু বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে কোনো মত তিনি কেতাব বা স্বাধীনবুদ্ধি হইতে গড়িয়া তোলেন নাই। আমার বিবাহ যখন হয় তখন সতেরো উত্তীর্ণ হইয়া আঠারোয় পা দিয়াছি ; তখন আমি কলেজে থার্ডইয়ারে পড়ি— এবং তখন আমার চিত্তক্ষেত্রে যৌবনের প্রথম দক্ষিণবাতাস বহিতে আরম্ভ করিয়া কত অলক্ষ্য দিক হইতে কত অনির্বচনীয় গীতে এবং গন্ধে, কম্পনে এবং মৰ্মরে আমার তরুণ জীবনকে উংস্থক করিয়া তুলিতেছিল, তাহা এখনো মনে হইলে বুকের ভিতরে দীর্ঘনিশ্বাস ভরিয়া উঠে। তখন আমার মা ছিলেন না— আমাদের শূন্তসংসারের মধ্যে লক্ষ্মীস্থাপন করিবার জন্য আমার পড়াশুনা শেষ হইবার অপেক্ষা না করিয়াই, বাবা বারো বৎসরের বালিকা নিঝরিণীকে আমাদের ঘরে আনিলেন । নিঝরিণী নামটি হঠাৎ পাঠকদের কাছে প্রচার করিতে সংকোচবোধ করিতেছি। কারণ, তাহদের অনেকেরই বয়স হইয়াছে— অনেকে ইস্কুল-মাস্টারি মুনসেফি এবং কেহ কেহ বা সম্পাদকিও করেন, তাহারা আমার শ্বশুরমহাশয়ের নামনির্বাচনরুচির অতিমাত্র লালিত্য এবং নূতনত্বে হাসিবেন এমন আশঙ্কা আছে। কিন্তু আমি তখন