পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৯৬ রবীন্দ্র-রচনাবলী নলিনী । সতীশ, আমার কথা শোনো – টেনিস কোর্তার খেদে শরীর নষ্ট কোরো না, খাওয়াদাওয়া একেবারে ছাড়া ভালো নয়। কোর্তা জিনিসটা জগতের মধ্যে সেরা জিনিস সন্দেহ নেই, কিন্তু এই তুচ্ছ শরীরটা না হলে সেটা ঝুলিয়ে বেড়াবার স্ববিধ হয় না । সপ্তম পরিচ্ছেদ শশধর । দেখো মন্মথ, সতীশের উপরে তুমি বড়ো কড়া ব্যবহার আরম্ভ করেছ ; এখন বয়েস হয়েছে, এখন ওর প্রতি অতটা শাসন ভালো নয়। বিধু। বলে তো রায়মশায়। আমি তো ওঁকে কিছুতেই বুঝিয়ে পারলেম না। মন্মথ। দুটো অপবাদ এক মুহূর্তেই। একজন বললেন নির্দয়, আর-একজন বললেন নির্বোধ। যার কাছে হতবুদ্ধি হয়ে আছি তিনি যা বলেন সহ করতে রাজি আছি— তার ভগ্নী যা বলবেন তার উপরেও কথা কব না, কিন্তু তাই বলে তার ভগ্নীপতি পর্যন্ত সহিষ্ণুতা চলবে না। আমার ব্যবহারটা কিরকম কড়া শুনি । শশধর । বেচারা সতীশের একটু কাপড়ের শখ আছে, ও পাচ জায়গায় মিশতে আরম্ভ করেছে, ওকে তুমি চাদনির— মন্মথ । আমি তো চাদনির কাপড় পরতে বলি নে । ফিরিঙ্গি পোশাক আমার দু-চক্ষের বিষ। ধুতি-চাদর চাপকান-চোগা পরুক, কখনো লজ্জা পেতে হবে না। শশধর। দেখো মন্মথ, সতীশ যদি এ বয়সে শখ মিটিয়ে না নিতে পারে তবে বুড়োবয়সে থামক কী করে বসবে, সে আরো বদ দেখতে হবে। আর ভেবে দেখো, যেটাকে আমরা শিশুকাল হতেই সভ্যতা বলে শিখছি তার আক্রমণ ঠেকাবে কী করে । মন্মথ । যিনি সভ্য হবেন তিনি সভ্যতার মালমসলা নিজের খরচেই জোগাবেন। যে দিক হতে তোমার সভ্যতা আসছে টাকাটা সে দিক হতে আসছে না, বরং এখান হতে সেই দিকেই যাচ্ছে। বিধু। রায়মশায়, পেরে উঠবেন না— দেশের কথা উঠে পড়লে ওঁকে থামানে যায় না । শশধর । ভাই মন্মথ, ও সব কথা আমিও বুঝি । কিন্তু, ছেলেদের আবদারও তো এড়াতে পারি নে। সতীশ ভাদুড়ি সাহেবদের সঙ্গে যখন মেশামেশি করছে তখন উপযুক্ত কাপড় না থাকলে ও বেচারার বড়ো মুশকিল। আমি র্যাঙ্কিনের বাড়িতে ওর জন্ত—