পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

७S२ রবীন্দ্র-রচনাবলী নলিনী । অমনি সেই অপমানেই কি নিরুদ্দেশ হয়ে যেতে হবে। এতবড়ো অভিমানী লোকের কারে সঙ্গে কোনো সম্বন্ধ রাখা শোভা পায় না। সাধে আমি তোমার মুখে ভালোবাসার কথা শুনলেই ঠাট্টা করে উড়িয়ে দি । সতীশ । নেলি, তবে কি এখনো আমাকে আশা রাখতে বল । নলিনী। দোহাই সতীশ, অমন নভেলি ছাদে কথা বানিয়ে বোলো না, আমার হাসি পায়। আমি তোমাকে আশা রাখতে বলব কেন। আশা যে রাখে সে নিজের গরজেই রাখে, লোকের পরামর্শ শুনে রাখে না । সতীশ । সে তো ঠিক কথা। আমি জানতে চাই তুমি দারিদ্র্যকে ঘৃণা কর কি না । নলিনী । খুব করি, যদি সে দারিদ্র্য মিথ্যার দ্বারা নিজেকে ঢাকতে চেষ্টা করে । সতীশ । নেলি, তুমি কি কখনো তোমার চিরকালের অভ্যস্ত আরাম ছেড়ে গরিবের ঘরের লক্ষ্মী হতে পারবে । নলিনী । নভেলে যেরকম ব্যারামের কথা পড়া যায়, সেটা তেমন করে চেপে ধরলে আরাম আপনি ঘরছাড়া হয় । সতীশ । সে ব্যারামের কোনো লক্ষণ কি তোমার— নলিনী। সতীশ, তুমি কখনো কোনো পরীক্ষাতেই উত্তীর্ণ হতে পারলে না। স্বয়ং নদী-সাহেব ও বোধ হয় অমন প্রশ্ন তুলতেন না। তোমাদের একচুলও প্রশ্রয় দেওয়া চলে না | সতীশ । তোমাকে আমি আজও চিনতে পারলেম না, নেলি । নলিনী । চিনবে কেমন করে। আমি তো তোমার হাল ফেশানের টাই নই, কলার নই– দিনরাত যা নিয়ে ভাব তাই তুমি চেন । সতীশ । আমি হাত জোড় করে বলছি নেলি, তুমি আজ আমাকে এমন কথা বোলো না। আমি যে কী নিয়ে ভাবি তা তুমি নিশ্চয় জান— নলিনী। তোমার সম্বন্ধে আমার অন্তর্দৃষ্টি যে এত প্রখর তা এতটা নিঃসংশয়ে স্থির কোরো না। ওই বাবা আসছেন। আমাকে এখানে দেখলে তিনি অনর্থক বিরক্ত হবেন, আমি যাই । প্রস্থান সতীশ । মিস্টার ভাদুড়ি, আমি বিদায় নিতে এসেছি। ভাদুড়ি । আচ্ছা, তবে আজ— সতীশ । যাবার আগে একটা কথা আছে।