পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\O3 o রবীন্দ্র-রচনাবলী ভালো হইতেছে না। বাবার সঙ্গে ঝগড়া করিয়া বাড়ি হইতে চলিয়া আসা, এটা তোমার উপযুক্ত নয়।” শুনিয়া তখনই বিছানা ছাড়িয়া উঠিয়া বেণু কহিল, “আপনার এখানে যদি সুবিধা না হয় আমি সতীশের বাড়ি যাইব ।” বলিয়া সে চলিয়া যাইবার উপক্রম করিল। হরলাল তাহার হাত ধরিয়া কহিল, “রোসো, কিছু খাইয়া যাও।” বেণু রাগ করিয়া কহিল, “না, আমি খাইতে পারিব না।” বলিয়৷ হাত ছাড়াইয়া ঘর হইতে বাহির হইয়া আসিল । এমন সময় হরলালের জন্য যে জলখাবার প্রস্তুত ছিল তাহাই বেণুর জন্য থালায় গুছাইয়। মা তাহাদের সম্মুখে আসিয়া উপস্থিত হইলেন। কহিলেন, “কোথায় যাও, বাছা ।” বেণু কহিল, “আমার কাজ আছে, আমি চলিলাম।” মা কহিলেন, “সে কি হয় বাছা, কিছু না খাইয়া যাইতে পরিবে না।” এই বলিয়া সেই বারান্দায় পাত পাড়িয়া তাহাকে হাতে ধরিয়া থাইতে বসাইলেন । বেণু রাগ করিয়া কিছু থাইতেছে না, খাবার লইয়া একটু নাড়াচাড়া করিতেছে মাত্র, এমন সময় দরজার কাছে একটা গাড়ি আসিয়া থামিল। প্রথমে একটা দরোয়ান ও তাহার পশ্চাতে স্বয়ং অধরবাবু মচ মচ শব্দে সিড়ি বাহিয়া উপরে আসিয়া উপস্থিত। বেণুর মুখ বিবর্ণ হইয়া গেল। মা ঘরের মধ্যে সরিয়া গেলেন। অধর ছেলের সম্মুখে আসিয়া ক্রোধে কম্পিত কণ্ঠে হরলালের দিকে চাহিয়া কহিলেন, “এই বুঝি ! রতিকাস্ত আমাকে তখনি বলিয়াছিল, কিন্তু তোমার পেটে যে এত মতলব ছিল তাহা আমি বিশ্বাস করি নাই। তুমি মনে করিয়াছ বেণুকে বশ করিয়া উহার ঘাড় ভাঙিয়া খাইবে । কিন্তু সে হইতে দিব না। ছেলে চুরি করিবে ! তোমার নামে পুলিস-কেস করিব, তোমাকে জেলে ঠেলিব তবে ছাড়িব ।” এই বলিয়া বেণুর দিকে চাহিয়া কহিলেন, “চল। ওঠ ।” বেণু কোনো কথাটি না কহিয়া তাহার বাপের পিছনে পিছনে চলিয়া গেল। সেদিন কেবল হরলালের মুখেই খাবার উঠিল না। જે এবারে হরলালের সদাগর-আপিস কী জানি কী কারণে মফস্বল হইতে প্রচুর পরিমাণে চাল ডাল খরিদ করিতে প্রবৃত্ত হইয়াছে। এই উপলক্ষে হরলালকে প্রতি সপ্তাহেই শনিবার ভোরের গাড়িতে সাত-আট হাজার টাকা লইয়া মফস্বলে যাইতে